লাভজনক হাঁস পালন ও এর সুবিধা সমূহ

লাভজনক হাঁস পালন
ও এর সুবিধা সমূহ (
Beneficial
of Duck rearing and its Advantages 
)

দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণ ও আমিষের চাহিদা পূরণে হাঁস পালন বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের হাওড়-বাওড় , নদী- নালা , খাল-বিল ,পুকুর-ডোবা বা যে কোন ধরণের জলাশয় বিশেষ করে নদী বিধৌত অঞ্চলের মানুষ  হাঁস পালন করে থাকেন ও এসব অঞ্চলই হাঁস পালনের  জন্য উপযোগী। এছাড়াও দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রাম অঞ্চলের অনেক বাড়িতেই ৮-১০টি  করে হাঁস দীর্ঘকাল ধরে
মানুষ পালন করে আসছেন। বাংলাদেশে বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ,বৃহত্তর কুমিল্লা  ,নওগাঁ জেলা, গাইবান্ধা জেলার কিছু এলাকায় , চুয়াডাঙ্গা জেলা, নারায়নগঞ্জ ,সুনামগঞ্জ ও সিলেটের কোন কোন অঞ্চলে হাঁস পালন করা হয় ।  এছাড়াও বর্তমানে নরসিংদীতে হাঁস পালনে বেকার যুবকরা আগ্রহী হয়ে উঠছে । দেশে বেশ কয়েকটি সরকারী হাঁস প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে ; তার মধ্যে খুলনা ‍ও নারায়নগঞ্জ অন্যতম। সরকারী হাঁস প্রজনন কেন্দ্র থেকে হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করলে ভালো মানের ও নির্ভেজাল বাচ্চা পাওয়া যাবে । তবে তুষ পদ্ধতিতে ডিম ফোটানোর সময় দেশী হাঁসের ডিম মেশানোর সম্ভবনা থাকে বিধায় উৎপাদিত বাচ্চার সাথে দেশী বাচ্চা মেশানো থাকতে পারে। দেশী বাচ্চা মেশানো থাকলে কাংখিত উৎপাদন পাওয়া যাবে না। তবে কালের বিবর্তনে এখন অনেকেই ইনকিউবেটর মেশিনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদন করছেন।

হাঁস পালনে পূর্ব কথা 

প্রকৃতিগতভাবে হাঁস পানিতে বসবাসকারী প্রাণি। যার ফলে হাঁসকে “ওয়াটার ফাউল (Water Fowl) বলে। প্রথম দিকে হাঁস বুনো পাখি বা বন্য পাখি হিসাবে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীকালে মানুষ ডিম ও মাংসের
উদ্দেশ্যে হাঁসকে আস্তে আস্তে পোষ মানাতে শুরু করে। হাঁস এশিয়াতে প্রথম পোষ মানাতে শুরু করে ও তখন থেকেই মানুষ হাঁসকে গৃহে পালন শুরু করে।

বুনো বা বন্য মুলার্ড হাঁস (The wild Mullerd Duck) যা আনাস বোসচ্যাস (Anas boschas)
নামে পরিচিত। এ প্রজাতীর হাঁস প্রায় সমস্ত হাঁসের পূর্বসূরি বা পূর্ব পুরুষ (Progenitor) ।  শুধুমাত্র মাসকোভি (Muscovy) ব্যতিক্রমধর্মী জাতের হাঁস যার পূর্বসূরি দক্ষিণ আমেরিকান হাঁসের বংশ লতিকা (Tree Duck)। যা ক্যাইরিনা মসচ্যাটা (Cairina Moschata) প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এ গৃহপালিত হাঁসের জেনাস –Anas ,প্রজাতি –Platyrhynchos ও ফ্যামিলি – Anatidae.

হাঁসের নোমেনক্ল্যাচার নিম্নরূপ (The nomenclature of Duck is follows) : –

১। পুরুষ হাঁস (Male Duck) : ড্রেক (Drake) ,

২। স্ত্রী হাঁস (Female Duck) :হাঁস (Duck) ,

৩। বাচ্চা হাঁস (Young Duck) : ডাকলিং (Ducklings) ।

উল্লেখ্য যে , প্রতিটি দেশী হাঁসের বছরে উৎপাদন ১০০-১৫০ টি পক্ষান্তরে
খাকী ক্যাম্পবেল (Khaki Campbel)  ও ইন্ডিয়ান রানার (Indian
Runner)  ২৫০-৩০০টি ডিম দেয়।

হাঁস পালনের সুবিধা
সমূহ (
Advantages of
rearing Ducks
) –

১। হাঁস মুরগির চেয়ে প্রায় ৪০-৫০ টি বেশী ডিম দেয়।

২। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে ওজনে ১৫-২০ গ্রাম বড়।

৩। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে মুরগির চেয়ে হাঁসের নজরদারী কম করতে হয়।

৪। খাদ্যাভাসের কারণে হাঁস পালন করা মুরগি পালন থেকে সহজ।

৫। মুরগির চেয়ে হাঁসের প্রাণ শক্তি অনেক বেশী। হাঁসের বাচ্চার ব্রুডিং
পদ্ধতি সহজ ও মুরগির চেয়ে অনেক রোগ প্রতিরোধী।

৬। নদীর তীরে ও স্যাতস্যাতে স্থান (Marshy land and wet land)
যেখানে মুরগি কিংবা প্রাণিসম্পদের অন্য কোন প্রাণি সহজে বেড়ে ওঠে না সেখানে হাঁস পালন করা সহজ।

৭। মুরগির ন্যায় হাঁসের মধ্যেও ঠোকরা-ঠুকরি সমস্যা রয়েছে ; তবে মুরগির ন্যায় জটিলতা সৃষ্টি হয় না।

৮। হাঁস সকাল ০৯.০০ ঘটিকার মদ্যেই ৯৫% এর বেশী পারে। তাই ডিম সংগ্রহে সময় ও পরিশ্রম কম।

৯। হাঁস বেশ বুদ্ধিমান পাখি ও সহজেই পোষ মানে। হাঁস সহজে পুকুরে বা জলাশয়ে যাওয়া শেখে ও বিকালে সময় মতো জলাশয় থেকে ফিরে আসা শিখে নেওয়া রপ্ত করে নেয়।

১০। হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে তুলনামূলোকভাবে আকারে বড় ও হাঁসের ডিমে মুরগির ডিমের চেয়ে পুষ্টিমান বেশী।

১১। হাঁস ১০-১৫ বছর পযর্ন্ত বেঁচে থাকে ও টানা ৪ বছর পযর্ন্ত ফলপ্রসূভাবে ডিম দিতে সক্ষম। হাঁস ডিম পাড়ার প্রথম বছরের চেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বছর বেশী ডিম দেয়। হাঁস মুরগির চেয়ে বছরে ৪০-৫০ টি বেশী ডিম দেয়।

১২। পুকুর বা জলাশয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি হাঁস পালন করা যায়। হাঁসের বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় । পক্ষান্তরে , অপ্রয়োজনীয় কিছু ছোট মাছ হাঁসের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রতি হেক্টোর জলাশয়ে ২০০-৩০০ টি হাঁস পালন সম্ভব।

১৩। হাঁস মুরগির ন্যায় কৃমি বা অন্যান্য সংক্রামক নেরাগের প্রতি বেশী সংবেদনশীল নয়। হাঁস মুরগির ন্যায় এভিয়ান লিউকোসিস ,মারেক’স রোগ ,রাণীক্ষেত রোগ , ইনফেকশাস ক্রংকাইটিস সহ অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রীয় রোগে আক্রান্ত হয় না।

১৪। হাঁসের বাচ্চা জন্মের পরে স্ত্রী –পুরুষ সনাক্তকরণ পদ্ধতি মুরগির বাচ্চার মতোই।

১৫। হাঁসের বাসগৃহ মুরগির ন্যায় সুনির্মাণ (Elaborate) না হলেও চলে। এমনকি মুরগির ন্যায় উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা না হলেও চলে।

১৬। হাঁস অনেক ধরণের পোকা-মাকড় ধরে খায়। ঘাস ফড়িং ও শামুক হাঁসের প্রিয় খাদ্য। শামুকের  ও মশার বংশ বিস্তার রোধ করে।

১৭। হাঁসের মাংস ও ডিম আমিষভোজীদের (Non-Vegetarians) জন্য অতি প্রিয় খাবার। হাঁসের মাংসে ১৪.৫% প্রোটিন থাকে।

১৮। সুষ্ঠভাবে পরিচর্যা ,হাঁসের যত্ন ও সঠিক সময়ে ডাক প্লেগ রোগ ও ডাক কলেরা রোগের ভ্যাকসিন হাঁসকে প্রয়োগ করলেই হাঁস  সুস্থ থাকবে ও বেশী দিন বাঁচবে এবং হাঁস পালন করে হাঁস খামারিরা  অধিক লাভবান হবে।