ছাগল খামারের জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ছাগল খামারের জীব নিরাপত্তা (bio- security) ব্যবস্থা

অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ও টেকসই ছাগল খামার স্থাপন করতে হলে প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে যাতে ছাগল খামারটিকে রোগ মুক্ত রাখা যায় ।রোগাক্রান্ত ছাগলকেচিকিৎসা করে সুস্থ করা সম্ভব হলেও তা থেকে সময় ভালো উৎপাদন পাওয়া যায় না ।আবার কিছু কিছু রোগ দেখা দিলে ছাগলকেচিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয় না ।তাই অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বাণিজ্যিক ছাগলের খামার স্থাপনের জন্য কিছু জীব নিরাপত্তা (bio-security) মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে ছাগল খামারটিকে রোগ মুক্ত রাখা যায় ।নিম্নে তা বর্ণনা করা হলো- ——-

ক) জায়গা নির্বাচন-

1) উঁচু ও খোলামেলা হতে হবে —
যদি ছাগল খামারের জায়গা নিচু ও স্যাঁতসেঁতে তবে ছাগলের কৃমির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায় এবং ছাগলের ঠান্ডা লেগেই থাকে এবং বাচ্চার মৃত্যুর হার অনেক বেড়ে যায়। এমন উচু জায়গা নির্বাচন করতে হবে যেখানে পানি জমে না এবং পর্যন্ত মাত্রায় বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকে।
2) ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এবং শহর থেকে দূরে হতে হবে –

সাধারণত শহর এলাকায় জমির দাম খুব বেশি তাই শহর থেকে কিছু দূরে জায়গা নির্বাচন করলে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে ।তাছাড়াও কিছু রোগ আছে যা মানুষ থেকে ছাগল এবং উল্টোভাবে ছাগল থেকে মানুষে স্থানান্তরিত হতে পারে ।শহর থেকে সামান্য দূরে হলে ঐ সব রোগ স্থানান্তরেরসম্ভাবনা কম থাকে ।

3) যোগাযোগের ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে –
খামারের ছাগলের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহেরজন্য এবং উৎপাদিত খাসী বা মাংস, দুধ বা বিষ্ঠা সহজেই বহন করা যায় সে জন্য খামার পর্যন্ত ভালো রাস্তা থাকতে হবে যাতে প্রয়োজনে গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন খামারের গেটে পৌঁছাতে পারে ।

খ) পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ –
খামারের ছাগলকেবিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা এবং ঘাস চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকা সহ বিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয় ।

গ) নিষ্কাশনের ব্যবস্থা –
ছাগলের বিষ্ঠা এবং মূত্র জমে যাতে স্যাঁতসেঁতে দুর্গন্ধযুক্ত না হয় সেজন্য এবং কৃমি ও ঠান্ডা জনিত রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে খামারে সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

ঘ)শ্রমিক ও জায়গার সহজ প্রাপ্যতা –
যে সমস্ত এলাকায় ভবিষ্যতে খামারের পরিধি বাড়ানো যাবে এবং শ্রমিকদের মজুরি কম এবং সহজলভ্য সে সব জায়গা নির্বাচন করা উত্তম ।
ঙ) বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বাসস্থান নির্মাণ –
ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা ছাগলের জন্য আরামদায়ক হয় এবং রোদ,বৃষ্টি, ঝড়,ঝাপটা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মুক্ত রাখা যায় ।
চ) ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নিরাপত্তা –
1)খামারের চারপাশে বেষ্টনী থাকতে হবে যাতে কুকুর, বিড়াল, শেয়াল,গরু এবং অন্যান্য প্রাণি খামারে প্রবেশ করে রোগ ছড়াতে না পারে ।
2) আধুনিক পদ্ধতিতে ছাগল খামার স্থাপন করতে হলে প্রধান গেট এর সাথে শৌচাগাড় থাকবে ।খামারের কর্মচারী যখন খামারে প্রবেশ করবে তখন বাহিরের পোষাক রেখে গোসল করে খামারের পোষাক ও জুতো পড়ে খামারের ভেতরে প্রবেশ করে ।খামার থেকে বাহির হবার সময় খামারের পোষাক ও জুতো খুলে নিজের পোষাক ও জুতো পড়ে খামারের বাহিরে আসবে ।
3) খামারের বাহিরের কোন লোক খামারে প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না ।যদি কোন লোককে প্রবেশ করতে দিতেই হয় তবে কর্মচারীদের নিয়মকানুন মেনে খামারের পোষাক পরিধান ও জুতো পড়ে খামারের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে ।
4) খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্যাদিকে যে বস্তায় বহন করা হবে
সে বস্তা নতুন এবং জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে ।
5) খামারের প্রবেশ পথে নিচু পাকা মেঝে (ফুটবাথ) থাকতে হবে যাতে সেখানে জীবাণুনাশক মিশ্রণ পানি রাখ যায় এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বহনকারী গাড়ির চাকা জীবাণুমুক্ত করা যায় ।
6) প্রাণি খাদ্য ও মালামাল বহনকারী গাড়িতে মাল ওঠানোর পূর্বে জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণু মুক্ত করতে হবে ।
7) ছত্রাকযুক্ত খারাপ কোন খাদ্য ছাগলকে সরবরাহ করা যাবে না ।
8) ইঁদুর যেন খাদ্য গুদামে খাদ্য খেয়ে রোগ ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ।
9) খাদ্য গুদাম বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তৈরি করতে হবে যেন ঘর শুষ্কও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায় ।
10) গরম কালে মিশ্রিত সুষম খাদ্য তৈরি করে সাধারণত সাত দিনের বেশি সংরক্ষণ করা উচিত নয় ।কারণ এমতাবস্থায় খাদ্যের গুণগতমান নষ্ট হতে পারে ।
11) খামারে নতুন ছাগল তোলার পূর্বে আইসোলেশন শেডে ছাগলকে কমপক্ষে পনেরো দিন রেখে পর্যবেক্খণ সাপেক্ষে কেবলমাত্র সুস্থ সবল ছাগলকে খামারের ভেতরে প্রবেশ করানো যেতে পারে ।
12) খামারে নতুন ছাগল তোলার পর নিয়মিত কৃমিনাশক ও ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
13) পাঁঠা, পাঁঠী,খাসী, বাড়ন্ত ছাগল, গর্ভবতী ছাগীকে যথাসম্ভব আলাদা ভাবে রাখতে হবে এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে হবে ।
14) প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে ছাগলের ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে ।
15) সপ্তাহে একদিন ছাগলের ঘর, খাবার ও পানির পাত্র জীবাণুনাশক দ্বারা জীবাণু মুক্ত করতে হবে ।
16) অসুস্থ ছাগলকে সুস্থ ছাগল থেকে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
17) যদি কোন ছাগল মারা যায় তবে মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে অথবা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
18) খামার হতে যদি কোন ছাগল বিক্রি অথবা প্রদর্শনীর জন্য বাইরে নিয়ে যাওয়া হয় তবে তা খামারে পূণরায় খামারের ভেতরে প্রবেশ করানো উচিত নয় ।
19) ছাগলের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাদ্য সঠিক পরিমাণে নিয়মিত সরবরাহ করতে হবে ।
20) সঠিক অনুপাতে (দশটি ছাগীর জন্য একটি পাঁঠা) ছাগী ও পাঁঠা পালন করতে হবে ।
21) পাঁঠা এবং ছাগীকে একসাথে খাদ্য খেতে ও মাঠে চরানো যাবে না,কারণ পাঁঠাগুলি ছাগীর খাদ্য খেতে অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং অনেক সময় মারামারি করে ক্ষতের সৃষ্টি করে ।
22) অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত পাঁঠা দ্বারা ছাগীকে প্রজনন করানো যাবে না ,করালে ছাগীতে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে ।