ছাগল পালন ও পরিচিতি

ছাগল (Goat):–
‘‘গরীবের গাভী’ বলে পরিচিত ছাগল এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের অন্যতম বাহন।বাংলাদেশের যে নিজস্ব ছাগলের জাত রয়েছে তা’হল ‘ব্ল্যাক বেংগল’ জাতের ছাগল ।দ্রুত প্রজননশীলতা উন্নত মাংস ও চামড়ার জন্য ‘ব্ল্যাক বেংগল’ ছাগল পৃথিবীর সেরা ।বর্তমানে অনেক বেকার যুবক এমনকি যারা বেশি বিনিয়োগ করতে পারবেন তারাও ছাগল পালনের ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে ।ছাগল পালনে শুধু যে প্রোটিনের চাহিদা পুরণ হবে তাই নয়; এতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করাও সম্ভব হবে ।
ছাগল সংগ্রহ: ছাগল সংগ্রহ করা একটি বড় সমস্যা ।যদিও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আমাদের এই বিশ্বখ্যাত ‘ব্ল্যাক বেংগল ‘জাতের ছাগল ।সরাসরি গ্রাম থেকে সংগ্রহ করতে পারলে অতি উত্তম ।তবে বড় আকারের খামার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ছাগল সংগ্রহ করা একটি বড় সমস্যা ।অনেকেই হাট- বাজার থেকে এক সাথে অনেক ছাগল সংগ্রহ করে থাকেন যা মোটেই কাম্য নয় ।এক সাথে অনেক ছাগল সংগ্রহ করলে যে সমস্যা হয় তা’ অনেকাংশেই মোকাবিলা করতে হিমশিম খেতে হয় ।বিশেষ করে আমাদের দেশের হাট- বাজার গুলো রোগ জীবাণুর ডিপো হিসেবে কাজ করে; যার ফলশ্রুতিতে হাট-বাজার থেকে সংগ্রহকৃত ছাগল সমূহ অতি সহজেই রোগে আক্রান্ত হয়।বিশেষ করে ‘পি পি আর ‘রোগ ।
এই ‘পি পি আর ‘ রোগ হলো ভাইরাস জনিত ছোঁয়াচে রোগ ।এই রোগ ছাগলের প্রতি অতি সংবেদনশীল ।মৃত্যুর হার অনেক বেশি ।এক কথায় বলা যায় এই রোগ খামারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরে ।চিকিৎসায় তেমন কোন ভালো ফলাফল পাওয়া যায় না ।এই রোগের কবল থেকে রক্ষা পেতে হলে ছাগলকে অবশ্যই ‘পি পি আর ‘ রোগের টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হবে ।এই টিকাবীজ একবার প্রয়োগ করলে তিন বছর পর্যন্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলবে ।তবে আমাদের দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব যেহেতু বেশি তাই বছরে অন্তত একবার টিকাবীজ প্রয়োগ করা দরকার ।মা-বাবা ছাগলকে ঠিকমতো টিকাবীজ প্রয়োগ করা থাকলে নতুন প্রজন্মের বাচ্চা ছাগলকে তিন মাস বয়সী হলে এই টিকাবীজ প্রয়োগ করতে হবে ।তাই টিকাবীজ প্রয়োগের ইতিহাস সঠিকভাবে জেনে ছাগল সংগ্রহ করতে পারলে অতি উত্তম ।
যেহেতু আমাদের দেশে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাট বাজার থেকে ছাগল সংগ্রহ করা হয় সে ক্ষেত্রে ছাগলকে ঠিকমতো টিকাবীজ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা জানা খুবই দুষ্কর ।তাই হাট বাজার থেকে ছাগল সংগ্রহ করা ছাগল খামারের ভেতরে থাকা ছাগলের সংস্পর্শে আসতে দেওয়া কোন ভাবেই কাম্য নয় ।হাট বাজার থেকে সংগ্রহকৃত ছাগল সমূহ কমপক্ষে দুই সপ্তাহ অন্যত্র রেখে পর্যবেক্খণ করতে হবে শারীরিক অবস্থার ।এই সময় ছাগল অসুস্থ হলে অবশ্যই চিকিৎসা করতে হবে ।চিকিৎসা শেষে ছাগল সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হলেই কেবল তাদেরকে খামার প্রবেশ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।নচেৎ নয়।অসুস্থ ছাগল কোন অবস্থাতেই সুস্থ ছাগলের সাথে মিশতে দেয়া যাবে না ।এমনকি বহিরাগত কোন সুস্থ ছাগলও কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পর্যবেক্খণ না করে সুস্থ ছাগলের সংস্পর্শে আসতে দেওয়া কোন ভাবেই কাম্য হবে না ।

নতুন ছাগল খামারি: যারা নতুন ছাগল খামারি তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পরে।কারণ তারা কোন কিছু না বুঝেই এক সাথে অনেক গুলো ছাগল হাট বাজার থেকে সংগ্রহ করে খামারে তোলে ।এতে করে নতুন ছাগল খামারিকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় ।যা মোটেও কাম্য নয় ।এমতাবস্থায় ছাগল ‘পি পি আর’ রোগে আক্রান্ত হলে বেশিরভাগ ছাগল মারা যেতে পারে ।তাই নতুন ছাগল খামারিকে খামারে নতুন ছাগল তোলার পূর্বে একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণ করা দরকার ।তা’নাহলে অনাকাঙিক্ষত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে ।তাই ছাগল পালনের ক্ষেত্রে খামারিকে একটু সজাগ থাকতে হবে।

নতুন ছাগল খামারি ছাগল সংগ্রহ করার পর ছাগলগুলোকে প্রথমতঃ সরবতের পানি পান করাতে হবে। দ্বিতীয়তঃ নতুন ছাগলগুলোকে যে কোনো ভালো ব্যান্ডের এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করাতে হবে। প্রয়োজনে ছাগলের শরীরের তাপমাত্রা মেপে এনালজেসিক ইনজেকশন পুশ করা যেতে পারে ।এ ব্যাপারে আগেই একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ানের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
নতুন ছাগল সংগ্রহ করার পর ছাগলগুলোকে অবশ্যই পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হবে ।তার পেটের অবস্থা, শারীরিক সুস্থতা, শারীরিক তাপমাত্রা, খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা, সরবতের পানি পান করার ইচ্ছা ইত্যাদি ।নতুন ছাগলকে অনেক ছাগলের মালিক হাটে তোলার আগে পেট ভরে খাইয়ে হাটে নিয়ে আসেন যা কোন ভাবেই কাম্য নয় ।এতে ছাগলের পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে ।আবার নতুন ছাগল ক্রয় করে নিয়ে আসার পরে বেশি মাত্রায় খেতেও দেওয়া উচিত নয় ।কারণ এমতাবস্থায় ছাগল বেশি মাত্রায় খুধার্ত থাকলে বেশি মাত্রায় খেয়ে বদহজম রোগে আক্রান্ত হতে পারে ।তাই এ বিষয়ে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে ।

ছাগলের খাবার তালিকা: —–
বাণিজ্যিক ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ (%)—–
খাদ্য উপাদান- ———”——————–শতকরা হার(%)
চাল/গম/ভূট্টা ভাংগা ——–”———–35.00
গমের ভূষি/রাইচ পলিশ- ———-””—-24.oo
খেসারী/মাসকলাই/ডালের
ভূষি———-””—————————— 16.oo
সয়াবিন/ তিল/সরিষার খৈল- ———-20.00
শুঁটকি মাছের গুড়ো- ———————-01.50
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট- ————–02.00
খাদ্য লবণ- —————-‘——————-02.00
ভিটামিন- মিনারেল প্রি-মিক্স
লুমিভিট ডি বি —————–‘———”’—00.50

মোট= 100.00
বিঃদ্রঃ– এই ধরনের মিশ্রণে প্রতি কেজিতে 10 মেগাজুল বিপাকীয় শক্তি এবং 62 গ্রাম বিপাকীয় প্রোটিন থাকতে পারে ।