টার্কির হিস্টোমোনিয়াসিস নিরব প্রাণঘাতী রোগ

টার্কি সেক্টরে নিরব প্রাণঘাতী রোগ হিস্টোমোনিয়াসিস ( Histomoniasis is a silent lethal disease in Turkey sector) : –

টার্কির হিস্টোমোনিয়াসিস একটি প্রোটোজোয়াল রোগ। যা হিস্টোমোনাস মেলিয়াগ্রেডিস ( Histomonas meleagrides ) নামে পরিচিত। এ রোগের বৈশিষ্ট্য হলো কলিজায় ক্ষত সৃষ্টি করা (Necrotic foci in the Liver) ও সিকামে ক্ষত ( Ulcerstion in the ceca) সৃষ্টি করে। এ রোগকে সংক্রামক এন্টারো হেপাটাইটিস (infectious enterohepatitis) বা ব্ল্যাক হেড ( Black Head Disease ) হয়ে থাকে।
হিস্টোমোনিয়াসিস রোগে মুরগির ক্ষেত্রে আক্রান্তের হার বেশি হলেও মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। তবে টার্কির ক্ষেত্রে এ রোগের তীব্রতা খুব বেশি এবং মৃত্যুর হারও বেশি।
হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমির ডিম মুরগি অথবা টার্কির বিষ্ঠার ( Fecal material) মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ হলে কেঁচোর (Earthworms ) মাধ্যমে হেটারেকিস গ্যালিনেরাম সুস্থ মুরগি অথবা টার্কিতে তা দ্রুত বিস্তার লাভ। পরিবেশের হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক নেমাটোডের ডিম কেঁচো ভক্ষণ করে এবং ঐ কেঁচো কোন মুরগি অথবা টার্কির সুস্থ মুরগি ও টার্কি একই সাথে হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক কৃমি ও হিস্টোমোনিয়াসিস আক্রান্ত হয় ।টার্কির ক্ষেত্রে হিস্টোমোনিয়াসিস রোগের সাথে যদি ক্লোস্ট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেন্স (Clostridium perfringens) ও এসকারেসিয়া কোলি ( Escherichia Coli ) ব্যাকটেরিয়ার সাথে সম্মিলিত ভাবে ঘটলে হিস্টোমোনিয়াসিস রোগের প্রাদুর্ভাব আরো ব্যাপকভাবে তীব্রতর হয়। এর সাথে সিকাল কক্সিডিওসিসও আক্রান্ত হতে পারে।

রোগের লক্ষণ ( Clinical Signs) : –
এ রোগে আক্রান্ত হলে টার্কি প্রাথমিক অবস্থায় সালফার রঙের ( Sulfur colored ) পাতলা পায়খানা করে। আক্রান্ত টার্কি দেখতে নিদ্রালুভাব মনে হবে। ডানা ঝুলে পরবে। হাঁটতে গিয়ে পরে যাবে। চোখ বন্ধ করে ঝিমাবে। মাথা নিচের দিকে নেবে। খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেবে। আক্রান্ত টার্কির মাথা কালচে বর্ণের ( Cyanotic) হতে পারে। আক্রান্তের ১২ দিন পর টার্কির দৈহিক ওজন হ্রাস পাবে। এ রোগে আক্রান্ত হলে ১৫ – ২০ দিন পর রেক্টাল তাপমাত্রা ( Rectal Temperature) বেড়ে ৪২.২ ৹সে হতে পারে। পরে তাপমাত্রা কমে ৪০৹সেঃ থাকাকালীন অবস্থায় টার্কি মারা যেতে শুরু করবে।
পোস্টমর্টেম পরীক্ষায় ( Post mortem Lesions ) সাধারণত কলিজা এবং সিকামে লক্ষণ পাওয়া যায়। সিকামের প্রাচীর পুরু হয় এবং সিকামে রক্তক্ষরণ হতে পারে। কলিজা আকারে ছোট হবে এবং নেক্রোসিস ( Necrosis ) থাকবে।

প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ ( Prevention and control ) : –
হিস্টোমোনিয়াসিস রোগের জীবাণু প্রধানত হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক নেমাটোডের ডিমের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। পাশাপাশি কেঁচোর ( Earthworms) ভূমিকাও উল্খেযোগ্য।
হিস্টোমোনিয়াসিস রোগের সংক্রমণ রোধে টার্কিকে রক্ষা করতে হলে টার্কিকে গৃহপালিত মুরগি ( Domestic Chicken ) থেকে অবশ্যই দূরে রাখতে হবে। কারণ মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে হেটারেকিস গ্যালিনেরাম নামক নেমাটোডের ডিম থেকে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। এ রোগ নিয়ন্ত্রনে খামারের পরিবেশ রৌদ্রময়,শুকনা এবং উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখতে হবে। সেই সাথে টার্কির খামার ব্যবস্থাপনা স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। তাহলে টার্কি খামারে এ জাতীয় রোগের প্রাদুর্ভাব অনেকাংশেই কমে যাবে। এছাড়াও টার্কিকে নিয়মিত কৃমি নাশক সরবরাহ করতে হবে।

চিকিৎসা ( Treatment ) : –
খামারের টার্কি হিস্টোমোনিয়াসিস নামক প্রোটোজোয়াল রোগে আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত উপাদান সমূহ ব্যবহার করা যেতে পারে।
১। নাইট্রোমিডাজল ( Nitroimidazole),
২। ডাইমেট্রিডাজল ( Dimetridazole ),
৩। মেট্রোনিডাজল ( Metronidazole ),
৪। ওর্নিডাজল ( Ornidazole ),
৫। টিমিডাজল ( Timidazole ),
৬। এলবেন্ডাজল (Albendazole) ।
এ জাতীয় উপাদান ব্যবহার করলে হিস্টোমোনিয়াসিস নামক প্রোটোজোয়াল জীবাণুর বংশ বিস্তার রোধ করবে। এছাড়াও আক্রান্ত টার্কির খামারে  Essential Oil ব্যবহার করা যেতে পারে। যেহেতু এ রোগের সাথে ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা থাকে তাই এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।