ডিমপাড়া মুরগির জরায়ু-যোনি নির্গমন

ডিমপাড়া মুরগির জরায়ু-যোনি নির্গমন প্রোল্যাপস)  / Utero-vaginal prolapse in laying hen

বাণিজ্যিক ডিমপাড়া মুরগি / ব্রিডার্স মুরগির প্রোল্যাপস একটি অতি পরিচিত ও সাধারণ সমস্যা। তবে  ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম কারণ। এজাতীয় সমস্যা সাধারণত যে সমস্ত মুরগি বয়োঃপূর্ণতার পূর্বে (In early production period) ডিম পাড়া শুরু করে সে সমস্ত মুরগিতে বেশি হয়। এ সমস্যায় বেশিরভাগ মুরগি মারা যায়।

সাধারণত মুরগি ডিম পাড়ার সময় মুরগির যোনি ‘র (Vagina) কিছু অংশ পায়ুপথের  (Vent) বাহিরে বের হয়ে (Eversion of vagina) আসে এবং তা’ পূণরায় পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায় (Retraction) বা  গুটিয়ে নেয় । কিন্তু  কোন কোন সময় যখন মুরগি ডিম পাড়ে এবং ডিম পাড়ার পর মুরগির ওভিডাক্ট প্রাচীর ( Oviduct wall) তার স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity)  হারিয়ে ফেলে এবং যোনি পূণরায় পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না যায় বা যোনি নিজেকে পূর্বের অবস্থায় গুটিয়ে নিতে না পারে সেক্ষেত্রে যোনির অংশ সহ ওভিডাক্ট সম্পূর্ণরুপে (Vaginal part of the oviduct) পায়ুপথের (Vent/common opening) বাহিরেই থেকে যায় বা অবস্থান করে । যোনির অংশ সহ ওভিডাক্ট পায়ুপথের বাহিরে বের হয়ে আসা বা অবস্থান করাই হলো জরায়ু-যোনি নির্গমন বা প্রোল্যাপস (Utero-vaginal prolapse) ।

মুরগি ডিম পাড়ার সময় উজ্জ্বল লাল রঙ্গের ওভিডাক্ট  (Bright red colour of this oviduct ) ঝাঁকের অন্য মুরগিকে আকৃষ্ট করে (Attracts to the other birds of a flock) । এমতঃবস্থায় এক মুরগির ঐ লাল অংশে অন্য মুরগি ঠোক দেয় (Pick at the area) । এতে আক্রান্ত মুরগির রক্তক্ষরণ হয় এবং মারা যায়। আর আক্রান্ত বেঁচে থাকা মুরগি জীবাণু দ্বারা সংক্রামিত (Infection) হয়।

 নিম্নে ডিমপাড়া মুরগি প্রোল্যাপসে আক্রান্ত হওয়ার কতিপয় সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হলো (Some probable  causes of prolapse  in laying hen discousing bellow): —

১। অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পুলেট মুরগি (small size pullet hen) যদি বড় আকারের ডিম পাড়ে সেক্ষেত্রে পুলেট মুরগির যোনিতে ডিম পাড়ার সময় অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে ও মুরগির যোনি বের হয়ে আসতে পারে এবং এতে মুরগি পরিশ্রান্ত (Exhausted) হবে । ফলে মুরগির বের হয়ে আসা যোনি পূর্বের অবস্থায় আর গুটিয়ে নিতে পারে না । এ দৃশ্য অন্য মুরগির নজরে আসলে ঠোক দিবে এবং সংশ্লিষ্ট মুরগির রক্ত খাওয়ার বদ অভ্যাস গড়ে ওঠে। এমতঃবস্থায় বেশি রক্তক্ষরণ ঘটলে মুরগির মৃত্যু হবে।

২।ডিমপাড়া মুরগির ওভিডাক্টের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি বা ফ্যাট জমলে ওভিডাক্টে ডিমের স্বাভাবিক অবস্থান বা পজিশন (Oviposition)  বাধাঁগ্রস্থ হবে। ফ্যাটি মুরগির ডিম পাড়ার সময় ওভিডাক্টের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণে ওভিডাক্ট তার স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে ফেলে এবং মুরগি ডিম পাড়ার পর যোনিকে পূণরায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে নিতে পারে না।

পোলট্রি খাদ্যে উচ্চ মাত্রায় ক্যালোরী-প্রোটিন (High calorie-protein)  বিদ্যমান থাকলে মুরগির এবডোমনিাল ফ্যাট বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত এবডোমিনাল ফ্যাট (Excessive abdominal fat)  মুরগির ডিম পাড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

৩। ঝাঁকের মুরগির অসামণ্জ্ঞস্যতা  (Poor flock uniformity): — দূর্বল  ব্যবস্থাপনার কারণে ঝাঁকের মুরগি ছোট-বড় হয়ে থাকে । ২০ সপ্তাহ বয়সে মুরগির দৈহিক গড় ওজন যা থাকা দরকার অনেক সময় সেটি থাকে না । বয়স অনুযায়ী মুরগির দৈহিক গড় ওজন স্বাভাবিক না থাকলে ছোট আকারের মুরগি বা ওজনে কম এ ধরণের মুরগি প্রোল্যাপসে আক্রান্ত হয় বেশি।

৪। পুলেট মুরগিকে আগেভাগে ডিম পাড়ানো উচিৎ নয়। তাই পুলেপ মুরগিকে আগেভাগে আলো দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ২০ সপ্তাহ বয়সের আগেই পুলেট মুরগিকে আলো প্রদান করলে আগেভাগেই ডিম পাড়তে শুরু করবে । এতে হিতে বিপরিত হবে। কারণ মুরগির শরীর ঠিকভাবে গঠিত না হলে প্রোল্যাপসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এছাড়াও পুলেট মুরগিকে যেমন আগেভাগে আলো প্রদান করা ঠিক নয় তেমনি ডিমপাড়া মুরগিকে বয়স অনুযায়ী আলোকদান সীমা অতিক্রম করা যাবে না। আবার আলোর তীব্রতা যাতে বেশি না হয় সে দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে। ডিমপাড়া মুরগির ক্ষেত্রে আলোকদান সীমা অতিক্রম কিংবা আলোর তীব্রতা বেশি হলে প্রোল্যাপসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।

৫। ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে মুরগির প্রোল্যাপস হতে পারে । বিশেষ করে উপযুক্ত সময়ে যথাযথভাবে মুরগির ঠোঁট না কাঁটা(poor debeaking) ,পরিবেশগত ধকল/পীড়ন (environmental stress) বিশেষ করে অতিরিক্ত গরম ও শীত (excess heat & cold),আলোর তীব্রতা ও বেশি সময় ধরে আলো প্রদান, দূর্বল বায়ু প্রবাহ (poor ventilation), অপ্রতুল খাদ্য ও পানির পাত্র ,মুরগির ঘনত্ব,সঠিক সময়ে সতেজ পানি সরবরাহ না দেওয়া ইত্যাদি কারণে ডিমপাড়া মুরগির ক্ষেত্রে প্রোল্যাপস জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।

ডিমপাড়া মুরগির প্রোল্যাপস (prolapse or blow outs) জনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে যথাযথ ব্যবস্থাপনা (proper management ) ও উত্তম খাদ্য ব্যবস্থাপনার (good quality feed ingredient,proper feeding programme)  দিকে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে।