মুরগির বিষ্ঠা ভেজা হওয়ার কারণ

মুরগির বিষ্ঠা ভেজা বা বিষ্ঠার সাথে পানির পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণ / Causes for wet droppings in poultry

মুরগির বিষ্টায়  প্রায় ৭০-৮০% পানি থাকে। মুরগি যদি দিনে ১০ কেজি খাদ্য গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে ১২ কেজি বিষ্ঠা ত্যাগ করে এবং এর মধ্যে ৯ কেজি পানি থাকে। বিষ্ঠার সাথে অতিরিক্ত পানি থাকলে লিটার অহেতুক সহজে ও দ্রুত ভিজে যায়।  উপযুক্ত বায়ু প্রবাহ ব্যবস্থা (Proper ventilation system )  এবং ভালোভাবে লিটার নাড়াচড়া (Racked) করলে লিটার শুস্ক (Dry) থাকে। ভিজা লিটারে (Wet litter) , ছত্রাক বিশেষ করে এসপারজিলাস (Aspergillus) , কক্সিডিয়ার অপরিপক্ক উসিস্ট (Coccidial immature Oocysts)  বা পরজীবীর (Parasitic eggs grow or mature) সংক্রমণ বা উপদ্রব ( Infection or infestation) মুরগির ঝাঁকে বৃদ্ধি পায়। মুরগির বিষ্ঠা যাতে সঠিক থাকে সে বিষয়ে নিবির পর্যবেক্ষণ রাখতে হবে এবং বিষ্ঠা শুস্ক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

খাঁচায় পালন করা হয় এমন ডিমপাড়া মুরগির ক্ষেত্রে, মুরগির বিষ্ঠা শেডের ভিতর খাঁচার নীচে পতিত হয় তখন অনেক বিষ্ঠা একত্রে জমে যায় এমতঃবস্থায় বিষ্ঠার জলীয় অংশ সম্পূর্ণরুপে ফ্লোরে বা মাটিতে শোষিত হয় না। ফলে বিষ্ঠা বেশি আর্দ্র বা ভেজা থাকে। এক্ষেত্রে শেডের ভেতর পর্যাপ্তমাত্রায় বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং শেডের মেঝের উচ্চতা মাটি (Ground level)  থেকে যথেষ্ঠ উচ্চতায় নির্মাণ করতে হবে।

বিষ্ঠায় বেশি জলীয়ভাব থাকলে কিংবা পানির আধারে ছিদ্র থাকলে ম্যানিউর পিট (Manure pit area) তাড়াতাড়ি ভরে যাবে । তাই এ অবস্থা বিদ্যমান থাকলে তা সংশোধন করতে হবে।

অনেক সময়ে, মুরগির বিষ্ঠা নানাবিধ কারণে পাতলা বা বিষ্ঠায় জলীয় অংশের পরিমাণ বেশি হতে পারে। মুরগির বিষ্ঠা বেশি পাতলা হলে মুরগিতে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। মুরগির বিষ্ঠা পাতলা হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো—

১। স্নায়ুবিক দুর্বলাবস্থা (Nervousness): —  

মুরগি যখন ভীত হয় তখন নরম বিষ্ঠা ত্যাগ করে। হঠাৎ কোন শব্দ, শিয়াঁল, কুকুর, বিড়াল কিংবা চিল, বাজ পাখির আওয়াজ ও আক্রমণ । আবার নতুন কোন অপরিচিত মানুষ দেখলেও মুরগি স্নায়বিক চাপে আক্রান্ত হলে নরম পায়খানা করে।

২। রোগে আক্রান্ত (Diseases condition) : —

মুরগি রোগে আক্রান্ত হলে পাতলা পায়খানা বা তরল বিষ্ঠা ত্যাগ করে। এজাতীয় রোগের মধ্যে ককসিডিওসিস, কলিব্যাসিলোসিস, কৃমিতে আক্রান্ত বিশেষ করে এসকারিডিয়া, ক্যাপিলারিয়া, ফিতাকৃমি, ফাংগাল সংক্রমণ বিশেষ করে ক্যানডিডিয়াসিস। খাদ্যের পাত্রে যদি কোনভাবে পানি উপচে পরে খাদ্যকে ভিজে ফেলে এবং সে খাদ্য যদি বাসি হয় সেক্ষেত্রে এসমস্ত বাসি খাবার খেয়ে সংশ্লিস্ট মুরগি অতি সহজে ক্যানডিডিয়াসিস রোগে আক্রান্ত হয়। মুরগি ক্যানডিডিয়সিস রোগে আক্রান্ত হলে মুরগির বিষ্ঠা নরম বা পাতলা হয়।

৩। ম্যাশ বা পাউডারি খাদ্য (Mash or powderyfeed) : —

ম্যাশ বা পাউডারি খাদ্য মুরগি সহজে হজম করতে পারে না।এজাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলে মুরগির বদ হজম শুরু হয়। এমতঃবস্থায় মুরগির বিষ্ঠা পাতলা বা নরম হয়। ক্রাম্বস বা পিলেট ফিড (Crumbs or pellets feed) মুরগিকে নরম, বিষ্ঠা থেকে রক্ষা করে। তবে পিলেট ফিড কোনভাবেই নরম বা ময়েশ্চারযুক্ত হওয়া যাবে না। এতে খাদ্য ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হবে এবং মুরগির যকৃত বা লিভার নষ্ট হবে। ফলে মুরগি খাদ্য সঠিকভাবে হজম করতে পারবে না। বরং মুরগি বদ হজমে আক্রান্ত হলে মুরগির বিষ্ঠা পাতলা বা নরম হবে।

৪। খনিজ লবণ (Minerals/ minerals salt) : —

পোলট্রি খাদ্যে খনিজ লবণ বিশেষ করে খাদ্য লবণ (Sodium chloride)  সহ আরো অন্যান্য খনিজ লবণের সুক্ষ্ম কণা বেশি থাকলে মুরগির পানি গ্রহণের ইচ্ছে বেড়ে যায়্ । মুরগির ঘর্মগ্রন্থী না থাকায় অতিরিক্ত পানি গ্রহণ করলে তা’ মুরগির বিষ্ঠার সাথে বেড়িয়ে যায় । এমতঃবস্থায় মুরগির বিষ্ঠা পাতলা হয়।

৫। পানির গুণগতমান (Water quality) : —      

মুরগিকে সরবরাহকৃত পানিতে বা পানির পাত্রে কোন রকম অর্গানিক বস্তু থাকা যাবে না। অর্গানিক বস্তু বিশেষ করে এলজি (Algae) মুরগির খাবার পানিতে থাকা চলবে না কিংবা পানির পাত্রে বা পানির ট্যাংকিতে জন্মাতে দেওয়া যাবে না। পানির পাত্র বা পানির ট্যাংকি ঠিকমতো পরিস্কার না করলে কয়েক দিনের মধ্যেই নীলাভ-সবুজ রঙ্গের এলজি জন্মায়। এলজি মুরগির খাবার পানিকে কলুসিত করে এবং মুরগির হজম প্রক্রিয়াকে বাধাঁগ্রস্থ করে । এমতঃবস্থায় মুরগি পাতলা বিষ্ঠা ত্যাগ করে।

৬। মুরগির হরমোন পরবির্তন (Homonal changes of hen at the point of laying stage) : —

মুরগি যখন ডিমপাড়া শুরু করে তখন মুরগির দেহে হরমোন নিঃসরণ পরবির্তন হতে শরু করে । এমতঃবস্থায় মুরগির বিষ্ঠা পাতলা হয়। এ সময় মুরগির হরমোন পরিবর্তন জনিত কারণে মুরগি নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। ডিম পাড়ার শুরুতে মুরগি সাধারণত ফাউল কলেরা , ইনফেকশাস কোরাইজা এমনকি রাণীক্ষেত রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

৭। পোলট্রি খাদ্যে মাইকোটক্সিন (Mycotoxin present in poultry feed) : —

পোলট্রি খাদ্যে মাইকোটক্সিন পোলট্রি খামার ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম অন্তরায়। খাদ্য পরবিহন , খাদ্য সংরক্ষণ ও মুরগিকে খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকলেই খাদ্যে ছত্রাক বা মোল্ড জন্মায়। এ সমস্ত ছত্রাক বা মোল্ডযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে মুরগির কলিজা বা লিভার অতি সহজে নষ্ট হয়। এমতঃবস্থায় মুরগি মাইকোটক্সিন বা মোল্ডযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে মুরগির বিষ্ঠা পাতলা বা নরম হয়।