মুরগির মানসম্মত ডিম উৎপাদনে খাদ্যের প্রভাব

মানসম্মত পোলট্রি ডিম উৎপাদনে খাদ্যের প্রভাব  অন্যান্য কারণ /Effect of feed and other factors on quality poultry egg  production

‘নিরাপদ ফিড-নিরাপদ খাদ্য (Safe feed-Safe foazod)’  এ নীতিশাস্ত্রকে বাস্তবায়িত করতে হলে প্রাণিকে অবশ্যই নিরাপদ ফিড সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে হবে।

মানসম্মত ডিম  (Quality egg ) উৎপাদন যেমন অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও ঠিক তেমনি এটি বর্তমানে সময়ের দাবী।  উৎপাদিত পোলট্রি পণ্য বিশেষ করে ডিম ও মাংস মানসম্মত না হলে মানবদেহের জন্য তা’ ক্ষতিকর এবং এটি সর্বজনবিদিত।

  • ভোক্তা সাধারণের মানসম্মত ডিম বিষয়ে দিনদিন সচেতনতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
  • পোলট্রি খামারিরাও ভোক্তা সাধারণের চাহিদা উপলব্ধি করে তারা মানসম্মত ডিম ও মাংস উৎপাদন করলে উৎপাদিত পণ্যের উচ্চমূল্য পাবে।
  • মানসম্মত ডিম ওউৎপাদন করলে পোলট্রি খামারিরা বাজারে টিকে থাকতে সক্ষম হবে।
  • তাদের উৎপাদিত কেবলমাত্র পণ্য মানসম্মত হলেই নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তাণী করতে পারবে।

তাই পোলট্রি খামারিকে তাদের উৎপাদনকৃত পণ্য মানসম্মত করতে হলে মুরগিকে অবশ্যই নিরাপদ ফিড সরবরাহের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

মানসম্মত ডিম উৎপাদনে খাদ্যের প্রভাব (Effect of poultry feed on quality egg production) :–

মানসম্মত ডিম (Quality egg) উৎপাদনে কতিপয় পথ্য উপাদান (Several dietary components) যা ডিমের গুণগতমান তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

  • খাদ্যের অনেক উপাদান ডিমে বাহিত হয় যা ডিমের গুণগতমান বৃদ্ধি করে।
  • মেটাবোলিক পরিবর্তন ঘটানোর মাধ্যমে কিছু উপাদানের সংশ্লেসণের ফলে উপাদান সমূহ ডিমে বাহিত হয়।
  • সরবরাহকৃত খাদ্যের খাদ্য উপাদান সমূহের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্

পরিবর্তনের মাধ্যমে ডিমের উপাদান গঠনে ভূমিকা রাখে যা।

মানসম্মত ডিম (Quality eggsবলতে ডিমের বহিঃ  অন্তঃ চারিত্রিক বৈশিষ্টকে(External and internal characters of eggs)  বুঝায় 

১। ডিমের আকার (Egg size),

২। মানসম্মত ডিমের খোঁসা (Quality egg shell) ,

৩। কম্পিত বা নড়বড়ে এয়ার সেল (Tremulous or loose air cell) ,

৪। মানসম্মত এলবুমিন (Albumin quality) ,

৫। মানসম্মত ডিমের কুসুম (Egg yolk quality) ,

৬। ডিমে দাগ (Taints in egg) ,

৭। ডিমে রক্ত ও মাংসের ন্যায় দাগ (Blood and meat spots in egg) ,

৮। ডিমে ড্রাগ বা ক্যামিকেলের অবশিষ্ট্যাংশ (Drug and chemical resudues in egg) ,

৯। ডিমের পুষ্টিমান (Nutritional value in egg)

১০। রুচিকর গন্ধ (Flavour of egg) ,

১১। ডিমের ক্লোস্টেরল ও অভ্যন্তরস্থ বস্তু (Cholesterol content) ।

 ডিমের আকার (Egg size) : —

কতিপয় ফ্যাক্টর ডিমের আকারের উপর প্রভাব বিস্তার করে। মুরগির ১৭-১৮ সপ্তাহ বয়সে কোন কোন খামারি মুররি খাদ্যে ২% ক্যালসিয়াম বৃদ্ধি করে। তবে এতে কোন গুণগতমানের প্রভাব ডিমের উপর পরে না।

ছোট আকারের ডিম (Small size egg) :–

ডিম ছোট হওয়ার কারণ –

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • নির্দিস্ট সময়ের আগেই যৌনতাপ্রাপ্ত লাভ করা (Early age at sextual maturity) ,
  • মুরগির ঝাঁকের বয়স কম হলে (Early age of the flock) ,
  • ঝাঁকের মুরগির দৈহিক ওজন কম হলে (Low body weight of the flock) ,
  • পরিবেশের উচ্চ তাপমাত্রা (High environmental temperature) ,
  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস রোগ (Infectious bronchitis disease) ,
  • অপর্যাপ্ত পানি গ্রহণ (Inadequate water intake) ,
  • অপর্যাপ্ত এনার্জি গ্রহণ (Inadequate energy intake) ,
  • অপর্যাপ্ত মিথিওনিন গ্রহণ (Inadequate methionine intake) ,
  • অপর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ (Inadequate protein intake) ,
  • অপর্যাপ্ত লিনোলিইক এসিড গ্রহণ (Inadequate linoleic acid) ,
  • পোলট্রি খাদ্যে মাইকোটক্সিন এর উপস্থিতি (Mycotoxins in poultry feed) ।

বড় আকারের ডিম (Large size eggs):–

ডিম বড় হওয়ার কারণ-

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • দেরিতে যৌনতা লাভ করা (Late age at sextual maturity) ,
  • ঝাঁকের মুরগির উচ্চ দৈহিক ওজন (High body weight of the flock) ,
  • ঝাঁকে বয়স্ক মুরগি (Older birds of the flock) ,
  • ঝাঁকের মুরগির পালক ঝরে পরা (Molted flock) ।

২) মানসম্মত ডিমের খোঁসা (Quality egg shell): —

ডিমের খোঁসা মানসম্মত না হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নে বর্ণিত হলো—

  • বিকলাঙ্গ ডিম (Misshapen eggs) ,
  • পাতলা,রন্ধ্রযুক্ত ও নরম খোঁসাযুক্ত ডিম (Thin,porous and soft shell eggs) ,
  • এবড়ো-থেবড়ো বা অমসৃণ বা খসখসে ডিমের খোঁসা (Rough shell eggs) ,
  • নানা বর্ণের দাগযুক্ত ডিমের খোঁসা (Mottled shell ) ,
  • হলুদ রেঙ্গের খোঁসা (Yellow colour shell) ,
  • রণ্জ্ঞকবিহীন খোঁসা যা বাদামী বর্ণের ডিম (Depigmentated shell in brown coloured eggs) ,
  • নিরক্ষীয় স্ফিতি (Equatorial bulge),
  • ঢেউখেলানো খোঁসা (Corrugated shell) ,
  • খোঁসা ফাটল ডিম (Cracked shell eggs) ,

বিকলাঙ্গ ডিম (Misshapen eggs) :-

ডিমের খোঁসা বিকলাঙ্গ হওয়ার কারণ–

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • নির্দিস্ট সময়ের আগেই উৎপাদনে আসা (Early stage of production) ,
  • বয়স্ক মুরগি (Older hen) ,
  • মুরগির স্থানান্তর (Movement of hen) ,
  • রোগ –রাণীক্ষেত রোগ,ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Diseases – Newcastle disease,Infectious bronchitis) ,
  • ফাংগিসাইড টক্সিসিটি(Thiram toxicity) ,

পাতলা,রন্ধ্রযুক্ত  নরম খোঁসাযুক্ত ডিম (Thin,porous and soft shell eggs) :-

ডিমের খোঁসা পাতলা, নরম ও রন্ধ্রযুক্ত হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপ –

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • উচ্চ তাপমাত্রা (High temperature) ,
  • বয়স্ক মুরগি (Older hen) ,
  • রাতে মুরগিকে ঝামেলায় ফেলা (Disturbance in night of the birds) ,
  • সালফেন্যামাইডস (Sulphonamides) ,
  • রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle disease) ,
  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious bronchitis) ,
  • ইডিএস ৭৬ (EDS76) ,
  • খাদ্যে ফাংগিসাইড টক্সিসিটি (Thirum toxicity) ,
  • খাদ্যে উচ্চ মাত্রায় ম্যাগনেশিয়াম (High level of Magnessium in feed) ,
  • খাদ্যে উচ্চ মাত্রায় ফ্লোরিন (High level of Florine in feed) ,
  • অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ (Inadequate feed intake) ,
  • খাদ্যে ক্যালসিয়াম বা ফসফরাসের ঘাটতি (Calcium or phosphorus deficiency in feed) ,
  • খাদ্যে অসম ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অনুপাত (Imbalance of Calcium phosphorous ratio in feed) ,
  • খাদ্যে অপর্যাপ্ত ভিটামিন ডি (Inadequate Vitamin D3 in feed) ,
  • খাদ্যে অপর্যাপ্ত ম্যাঙ্গানিজ (Inadequate Manganese in feed) ,
  • খাদ্যে অপর্যাপ্ত জিণ্ক (Inadequate zinc in feed) ,
  • খাদ্যে অপর্যাপ্ত কপার (Inadequate Copper in feed) ,
  • খাদ্য বা পানিতে অতিরিক্ত ব্লচিং পাউডার (Excess Chlorinated Hydrocarbons in poultry feed or water) ,
  • খাদ্য বা পানিতে ম্যলাথিয়োন (Malathion in feed or water) ।

এবড়ো থেবড়ো ডিমের খোঁসা (Rough shell in eggs) :–

যে সব কারণে ডিমের খোঁসা এবড়ো থেবড়ো বা অমসৃন হয় তা’ নিম্নে বর্ণনা করা হলো—

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • নির্দিস্ট সময়ের পূর্বেই উৎপাদন (Early stage of production) ,
  • বয়স্ক মুরগি (Older hen) ,
  • ধকল/পীড়ন (Stress) ,
  • অতিমাত্রায় এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার (Uses of excess antibiotics for treatment) ,
  • রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle disease) ,
  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious bronchitis) ,
  • অতিমাত্রায় ক্যালসিয়াম গ্রহণ (High Calcium intake) ,
  • ফাংগিসাইড টক্সিসিটি (Thiram toxicity) ,
  • নিম্ন মানের পানি (Poor water quality) ।

নানা বর্ণের দাগযুক্ত ডিমের খোঁসা (Mottled  egg shell) :–

বিভিন্ন কারণে ডিমের খোঁসা দাগযুক্ত হতে পারে। নিম্নে তা’ উল্লেখ করা হলো –

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • বৃষ্টির দিন (Rainy days – High humidity) ।

হলুদ রঙ্গের খোঁসা (Yellow colour shell) : —

  • পোলট্রি খাদ্যে অতিরিক্ত পরিমানে ও দীর্ঘ সময় ধরে অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করলে ডিমের খোঁসার রঙ্গ হলুদ বর্ণ ধারন করে।

রণ্জ্ঞকবিহীন খোঁসা যা বাদামী বর্ণের ডিম (Depigmented shell in browen coloured eggs) : —

নিম্নলিখিত কারণগুলো ডিমের রঙ্গ কে রণ্জ্ঞকবিহীন বাদামী বর্ণে পরিনত করার জন্য দায়ী।

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • উচ্চ মাত্রায় উৎপাদন (High production) ,
  • অতিরিক্ত তাপমাত্রা (High temperature) ,
  • কৃমিনাশক বিশেষ করে – পাইপেরাজিন ও নিকারবাজিন (Dewarming – especialy Piperazine and Nicarbazine) ,
  • রোগ – বিশেষ করে রাণীক্ষেত রোগ, ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস ও ইডিএস৭৬ (Diseases – especialy Newcastle disease, Infectious bronchitis and EDS76) ।

নিরক্ষীয় স্ফিতি (Equatorial bulge /Ridged waist) : —

  • ধকল/পীড়ন (Stress) ,
  • আর্লি ক্যালসিফিকেশন সম্পন্ন করা (Activity in early calcification / Disturbance) ।

ঢেউ খেলানো ডিমের খোঁসা (Corrugated eggs shell) :–

  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious bronchitis) ,
  • কপারের অভাব (Copper deficiency) ,
  • ফাংগিসাইড টক্সিসিটি (Thiram toxicity) ,
  • ল্যাথিরোজেন বেটা-এমাইনোপ্রোপায়োনাইট্রাইল (Lathyrogen bête-aminopropionitrile/ BAPN) ।

লাইসিল অক্সিডেস (Lysyl oxidase) এনজাইমের কার্যকরীতার জন্য কপারের দরকার । এ ধরনের এনজাইম মুরগির ওভিডাক্টে অবস্থান করে। এ এনজাইম শেল প্রাচীর তৈরিতে কাজে লাগে। কিন্তু ল্যাথিরোজেন বেটা-এমাইনোপ্রোপিয়োনাইট্রাইল এ ধরনের এনজাইম তৈরিতে বাধা দেয়।

খোঁসা ফাটল ডিম (Cracked shell eggs) : —

যেসব কারণে ডিমের খোঁসা ফেটে যায় তা’নিম্নে বর্ণিত হলো-

  • ব্রিড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • ডিম মজুত রাখার বেশি ঘনত্ব (High stock density) ,
  • খাঁচার ডিজাইন (Cage design) ,
  • ডিম সংগ্রহ পদ্ধতি (Eggs collection method) ,
  • ডিম স্পর্শ বা ধরার কৌশল (Handling method of eggs) ,
  • ট্রে’র ডিজাইন (Tray design) ।

কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান ও উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ডিমের খোঁসার মান বৃদ্ধি করা যায়।

  • ক্যালসিয়াম ফসফরাস যে সমস্ত খাদ্যে রয়েছে এমন উৎস্য থেকে খাদ্য সরবরাহ ও ক্যালসিয়াম ফসফরাসের রেশিও ঠিক রাখা ,
  • ফাইটেজ এনজাইস সরবরাহ দেওয়া ,
  • খাদ্যে ম্যাঙ্গানিজ ,জিন্ক ও কপার থাকা,
  • মুরগি নিজেই তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভিটামিন সি সিনথেসিস করতে সক্ষম । কিন্তু ধকলে আক্রান্ত হলে তা’ অপ্রতুল । তাই মুরগিকে ধকল থেকে রক্ষা করতে হলে মুরগির খাদ্যে ভিটামিন সি সরবরাহ দিতে হবে। ধকলে/পীড়নে আক্রান্ত ডিমপাড়া মুরগিকে প্রতি কেজি খাদ্যে ১০০মিলিগ্রাম হিসেবে ভিটামিন সি সরবরাহ দেওয়া দরকার। এতে ডিমের খোঁসার মান উন্নত হবে।
  • ডিমের খোঁসার মান উন্নয়নে খাদ্যে বাড়তি ভিটামিন ডি৩ সরবরাহ দিতে হবে। প্রতি কেজি খাদ্যে ২০০০-৩০০০আইইউ(IU) ভিটামিন ডি সরবরাহ দিলে ডিমের খোঁসার মান উন্নত হবে।
  • পোলট্রি খাদ্যে সোডিয়াম বাই কার্বনেট বা খাবার সোডা সরবরাহ দিলে রক্তে ক্লোরাইড লেভেল কমে যাবে এবং বাই কার্বনেট লেভেল বৃদ্ধি পাবে। এতে ডিমের খোঁসার মান ভালো হবে।
  • পোলট্রি খাদ্যে নিয়মিত প্রোবায়োটিক ব্যবহার করা উচিৎ । এতে পোলট্রির অন্ত্রে পর্যাপ্ত মাত্রায় মাইক্রোফ্লোরা থাকবে এবং অন্ত্রের ভিলাই সুগঠিত থাকবে । অন্ত্র সুস্থ থাকলে ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমূহ দেহে ভালোভাবে শোষিত হবে এবং মানসম্মত ডিম উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
  • ফিডিং ব্যবস্থাপনা (Feeding management) –

পোলট্রি খাদ্যে যে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করা হয় তার প্রধান উৎস হলো লাইমস্টোন পাউডার,ঝিনুক ভাঙ্গা বা শামুকের খোলস । লাইমস্টোন তুলনামূলোকভাবে ঝিনুকের চেয়ে সস্তা । ক্যালসিয়াস সাপ্লিমেন্টে খুবই সীমিত আকারে ম্যাগনেসিয়াম ও ফ্লোরিন থাকা আবশ্যক। বাণিজ্যিক ডিমপাড়া মুরগি ও ব্রিডার মুরগির খাদ্যে লাইমস্টোন পাউডার ৪% এর বেশি নয় ও ঝিনুক চুর্ণ ৪% এর কম নয় ; এভাবে ব্যবহার করতে পারলে ডিমের খোঁসার মান ভালো হবে।

সবার জানা থাকা দরকার যে , পোলট্রি খাদ্যে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট হিসেবে লাইমস্টোন বা ঝিনুক চুর্ণ বিকেল বেলার খাদ্যে সরবরাহ করলে ডিমের খোঁসার গঠন ভালো হয়। বড় আকারের লাইসস্টোন বা ঝিনুক চুর্ণ ধীরে ধীরে ও নিয়মিত নিয়ম মাফিক ক্যালসিয়ামের ডাইজেশন ও এবজরপশন হয়।  বেশি ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয় রাত্রে । কারণ রাত্রে ডিমের খোঁসা গঠনে ক্যালসিয়ামের ক্যালসিফিকেশন ঘটে।

  • মুরগির পালক ঝরা (Molting);-

ডিমপাড়াকালীন সময়ের পরবরতী সময়ে মুরগির বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিমের খোঁসা দুর্বল হতে শুরু করে ও ডিমের আকার বড় হতে থাকে। খুব সম্ভবত ডিমের আকার বড় হওয়ার কারণে ও ক্যালসিয়াম দেহে কম পরিমানে শোষনের জন্য ডিমের খোঁসা নরম হয়। পালক ঝরে পরার কারণে অন্ততঃপক্ষে প্রথম ৫-৬ মাস ডিমের খোঁসার মান ভালো হয় পোষ্ট মোল্টিং সময়ের আগ পর্যন্ত।

  • আলোকদান কর্মসূচি (Lighting programme) : –

ডিমের খেঁসা ও ডিম উৎপাদনে দৈনিক ১৩-১৪ ঘন্টা আলো যথেষ্ঠ। দিনের ও রাতের আলো ১৭-১৮ ঘন্টার বেশি হলে ডিমের উৎপাদন ব্যহত হবে ও ডিমের খোঁসার মান কমে যাবে।

  • তাপমাত্রা (Temperature) : –

গ্রীস্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ডিমের খোঁসার মান কমে যেতে থাকে। তাই সে সময়ে তাপমাত্রা যে কোনভাবে কমিয়ে আনতে পারলে ডিমের উৎপাদন সঠিক থাকবে ও ডিমের খোঁসার মানও ভালো থাকবে।

  • মুরগিকে বিরক্ত করা (Disturbance) :–

বিশেষ করে রাত্রে ডিমপাড়া মুরগিকে কোনভাবেই বিরক্ত করা যাবে না। রাতে অনেক সময় খামারের আশেপাশে হঠাৎ করে কুকুর ,শেয়াঁলের ডাক বা অন্য কোন আকস্মিক শব্দে মুরগি ভয় পায় ও ডিমপাড়া মুরগি বিরক্তি অনুভব করে। এতে মুরগির ডিমপাড়া কমে যায় ও ডিমের খোঁসা গঠনে সমস্যা হয়। অনেক সময় প্রিম্যাচিউর ডিম জরায়ুতে চলে আসে ; যা খোঁসা বিহীন ডিম।

  • রোগ (Diseases) : —

যে কোন রোগের প্রভাবে ডিমের উৎপাদন  ও ডিমের খোঁসা গঠন বাধাঁগ্রস্থ হয়। এতে ডিমের মান  ও ডিমের খোঁসার গঠন উভয় ঠিক থাকে না।

ডিমের গুণগতমাণ(Egg quality) রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle disease) ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious bronchitis) এগ ড্রপ সিন্ড্রোম( ইডিএস৭৬)-Egg drop syndrome(EDS76)
মুরগির স্বাস্থ (General health) প্রভাবিত করে (Affected) প্রভাবিত করে (Affected)স্বাভাবিক থাকে(Normal) স্পস্টতই (Apparently)
ডিমের উৎপাদন (Egg production) কমতে থাকে (Reduced) কমতে থাকে (Reduced) কমতে থাকে (Reduced)
ডিমের সাইজ (Egg size) স্বাভাবিক (Normal) ছোট (Small) ছোট (Small)
ডিমের আকৃতি(Eggs shspe) বিকলাঙ্গ (Misshapen) বিকলাঙ্গ (Misshapen) স্বাভাবিক (Normal)
ডিমের খোঁসা (Egg shell) খসখসে,পাতলা, রন্ধ্রযুক্ত,নরম,বিবর্ণ (Rough,thin,porous,soft,loss of colour) খসখসে,পাতলা,রন্ধ্রযুক্ত,নরম,বিবর্ণ (Rough,thin,porous,soft,loss of colour) খসখসে,পাতলা,রন্ধ্রযুক্ত,নরম,বিবর্ণ (Rough,thin,porous,soft,loss of colour)
ডিমের সাদা অংশ (Albumen) রক্ত ও মাংসের স্পট (Blood and meat spots) পানসে (Watery) পানসে (Watery)

উপস্থিত (Present)

          —

 কম্পিত  নড়বড়ে এয়ার সেল (Tremulous or loose air cell) : —

নিম্নলিখিত কারণে ডিমের এয়ার সেল নড়বড়ে হয়। যথা-

  • এবরো থেবরোভাবে ডিম হ্যান্ডলিং করা (Rough handling of eggs) ,
  • ডিম জমিয়ে রাখার অবস্থা (Storage condition of eggs) ,
  • দুর্বল খোঁসার ডিম (Poor egg shell quality) ,
  • রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle disease) ,
  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিসম (Infectious bronchitis) ।

 মানসম্মত এলবুমিন (Albumen quality) : —

ডিমের সাদা অংশ বা এগ এলবুমিন (Egg albumen) খাদ্য উপাদানের গুণে শক্ত হয়। এলবুমিনের রঙ্গের গভীরতা নির্ভর করে ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিনের উপর।

)সাদাটে গোলপী ( Pink white) :–

নিম্ন লিখিত কারণে ডিমের এলবুমিন সাদাটে গোলাপী রঙ এর হয়ে থাকে।

  • কটোন সীড মিলে বিশেষ করে সাইক্লেপ্রোপ্যানফ্যাটি এসিড (Malvalic and sterculic acid) ,
  • ব্যাকটেরিয়া (Bacteria) ।

পানসে সাদা (Watery white) :–

ডিমের এলবুমিন বা সাদা অংশ পানসে হওয়ার কারণ নিম্নে বর্ণিত হলো –

  • ব্রীড ও স্ট্রেইন (Breed and strain),
  • বয়স্ক মুরগি (Older hen) ,
  • অত্যাধিক তাপমাত্রায় বেশি সময় দরে ডিম সংরক্ষণ (Prolonged storage of egg at high temperature) ,
  • এমোনিয়া (Amoniation in store house) ,
  • সরবরাহকৃত খাদ্যে কপারের অভাব (Copper deficiency in supplying feed) ,
  • রাণীক্ষেত রোগ (Newcastle disease) ,
  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious bronchitis) ,
  • ল্যাথিরোজেন বেটা-এমাইনোপ্রোপিওনাইট্রাইল (Lathyrogen beta-aminopropionitrile /BAPN) ।

 মানসম্মত কুসুম (Yolk quality) : —

ডিমের কুসুমে অনেক রকমের পুষ্টিকর বা অপুষ্টিকর খাদ্যোপাদন পাওয়া যায়। খাদ্যে ব্যবহৃত ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্টস (Carotenoid pigments) ডিমের কুসুমের রঙ নির্ভর করে । ক্যারোটিনয়েড পিগমেন্টস এর মূল উৎস হলো হলুদ রঙ এর ভূট্টা,মেইজ গ্লুটেন মিল (Maize gluten meal), লুসার্ন মিল (Lucerne meal) ,মেরিগোল্ড পিটালস (Merigold petals)  অথবা তাদের নির্জাস বা সিনথেটিক পিগমেন্টস বিশেষ করে ক্যানথাক্সানথিন (Canthaxanthin), বি এপো-৮-ক্যারোটেনল (b-apo-8 carotenol) ,সিট্রান্যাক্সানথিন(Citranaxanthin) ও এস্টাজানথিন (Astaxanthin) ।

ডিমের কুসুমে কতিপয় অস্বাভাবিকতা (Abnormalities in egg yolkলক্ষণীয় 

হালকা রঙ এর কুসুম (Light colour yolk) :-

ডিমের কুসুম হালকা রঙ এর জন্য দায়ী –

  • স্বল্প জ্যানথোফিল পিগমেন্টস (Less xanthophyll pigments) ,
  • কফি বিন সীড (Coffee bean seed- Cassia occidentalis)।

অস্বাভাবিক রঙ (Abnormal colour) :–

ডিমের কুসুম অস্বাভাবিক রঙ এর কারণ—

  • গসিপল বা কটোন সীড মিল (Gossypol or cotton seed meal) ,
  • ক্যাপোক মিল (Kapok meal) ।

দধির ন্যায় কুসুম (Cheesy yolk) :–

এর জন্য দায়ী—

  • হিমায়ীত ডিম (Chilling of eggs) ,
  • তুলা বীজের তৈল (Cotton seed oil / Sterculic acid) ।

ডিমের চ্যাপ্টা কুসুম (Flat yolk of egg) : —

এর জন্য দায়ী –

  • নিকারবাজিন ব্যবহার (Uses of Nicarbazine) ,
  • অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ডিম সংরক্ষণ (Egg storage in high temperature)।

 দাগযুক্ত ডিম (Taint in eggs) : —

ডিমে দাগ হওয়ার কারণ হলো—

  • রবেইনিডিন (Robeinidine) – এটি হলো একটি এন্টিকক্সিডিয়াল ,
  • র‌্যাপসীড মিল (Sinapine of rapeseed meal)
  • ডিটারজেন্ট ব্যবহার ,
  • খাদ্যে ছত্রাক (Mould in feed) ,
  • তীব্র গন্ধযুক্ত স্থানে ডিম সংরক্ষণ (Eggs storage near strong odours) ,
  • খাদ্যে অতিরিক্ত মাছের তেল ব্যবহার ,
  • ক্যাপেলিন মিল (Capelin meal) ।

 ডিমে রক্ত  মাংসের ন্যায় দাগ (Blood and meat spots in eggs) : —

ডিমের অভ্যন্তরে রক্ত ও মাংসের ন্যায় দাগ দেখা যায় যা ডিমের অভ্যন্তরীন এক ধরনের সমস্যা। এর কারণ গুলো নিম্নরূপ –

  • ব্রীড ও স্ট্রেইন (Breed and strain) ,
  • ঠান্ডা আবহাওয়া (Cold environment) ,
  • আকস্মিক তাপমাত্রার পরিবর্তন (Marked temperature change) ,
  • বিরতিহীনভাবে আলো প্রদান (Continuous light) ,
  • বয়স্ক মুরগি (Older hen) ,
  • খাদ্যে অপর্যাপ্ত ভিটামিন –কে (Inadequate Vitamin K in feed) ,
  • খাদ্যে অপর্যাপ্ত ভিটামিন –এ (Inadequate Vitamin A in feed) ,
  • ধকল বা পীড়ন (Stress) ,
  • মাইকোটক্সিন (Mycotoxin i8n feed) ,
  • ইনফেকশাস ব্রংকাইটিস (Infectious bronchitis) ,
  • মুরগিকে অহেতুক বিরক্ত করা বা মুরগিকে অস্থির রাখা (Disturbance or flightiness of hens) ।

 ডিমে ড্রাগ বা ক্যামিকেলের অবশিস্টাংশ (Drug or chemical residues) : —

কতিপয় অপুষ্টিকর খাদ্য (Several dietary non-nutrients) বিশেষ করে খাদ্য ও পানিতে ফিড এডিটিভ (Feed additives) হিসেবে এন্টিবায়োটিক ,কক্সিডিওস্ট্যাস ব্যবহার করা হয় এবং খাদ্য সংরক্ষণের জন্য অনেক ফিড মিলার ভূট্টা ,গম ও অন্যান্য উপকরনাদি পোকাড় আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কীট নাশক ব্যবহার করেন কিংবা বীজের জন্য সংরক্ষণকৃত শস্যদানা ও সেগুলো যদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় তা’ পরবর্তী সময়ে পোলট্রি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে এসব খাদ্য পোলট্রি স্বাস্থ ও মানব দেহের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ হয়ে দ্বারায়।  পোকাড় উপদ্রব থেকে রক্ষার জন্যও গোডাউনে সংরক্ষনকৃত খাদ্যে কীট নাশক ব্যবহার করা হলে তা’ মানব দেহের জন্য ও পোলট্রি দেহের জন্যও বিরাট হুমকি। তাই মুরগি ও মানব দেহের জন্য টক্সিক ও সরাসরি ঝুকিপূর্ণ এবং যেগুলো মুরগির ডিমে জমে থাকে (Accumulate in eggs) নিম্নের ছকে তা’ উল্লেখ করা হলো –

ক্রমিক নং ক্যামিকেল /টক্সিন (Chemical/ toxin) উদাহরন (Examples)
০১ অর্গানোক্লেরিনস (Organochlorines) ডিডিটি,বিএইচসি,লিনডান (Lindane)
০২ সাইক্লোডিনস (Cyclodeines) এলড্রিন,এড্রিন,হেপ্টাক্লোর,ট্যাক্সোফেন,এন্ডোসালফেন,
০৩ অর্গানোফসপরাস কম্পাউন্ডস(Organophosphorous compounds) ম্যালাথিয়োন (Malathion)
০৪ কার্বামেটস (Carbamates) কার্বারিল (Carbaryl)
০৫ ফাংগিসাইডস (Fungicides) আরাসান (Arasan or Thiram)
০৬ মাইকোটক্সিনস (Mycotoxins)             —
০৭ মার্কারী কম্পাউন্ডস (Mercury compounds) মিথাইল মার্কারী ক্লোরাইড (Methyl mercury chloride)

০৯ ডিমের পুষ্টিগুণ (Nutritive value of egg) : —

কতিপয় পুষ্টির সমন্বয়ে ডিমের পুষ্টিমান আরো পরিবর্তিত হয়ে ডিমের মানোন্নয়ন ঘটে।

ডিমে নিম্নলিখিত পুষ্টি সমূহ বিদ্যমান –

  • ফ্যাটি এসিডের উপাদান (Fatty acid composition) ,

আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (Unsaturated fatty acid)

  • চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামি (Fat soluble Vitamin) ,
  • পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন (Water soluble Vitamin) ,

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (Vitamin B complex)

  • ডিমে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি (Trace minerals in egg) ,

আয়রন,কপার,ম্যাঙ্গানিজ,আয়োডিন ও ফ্লোরিন ।

১০ ডিমের রুচিকর গন্ধ (Flavour of egg) : —

মুরগিকে সরবরাহকৃত খাদ্যের উপর ডিমের ফ্লেভার অনেকাংশই দায়ী । ডিমের ফ্লেভার আনতে খাদ্যে অনেকেই ফিড এডিটিভস হিসেবে ফ্লেভার উপাদান ব্যবহার করে থাকেন। তবে ডিমের ফ্লেভারের জন্য মুরগিকে স্বাভাবিক খাদ্য সরবরাহ দেওয়াই উত্তম।

১১ ডিমের অভ্যন্তরস্থ বস্তু ক্লোস্টেরল (Cholesterol content in egg) : —

ডিমের অভ্যন্তরস্ত বস্তু ক্লোস্টেরল নিয়ে মানুষের ভাবনার শেষ নেই। তবে প্রাত্যাহিক জীবনে একজন সুস্থ মানুষের যে পরিমান ক্লোস্টেরল দরকার তা’ একটি ডিমের মধ্যে নেই। অনেকেই অভিযোক করেন যারা হৃদরোগে ভোগেন তারা ডিমের কুসুম গ্রহন করতে পারবেন না। বর্তমানে হৃদরোগ বিশারদগণ হৃদরোগে যারা ভোগেন তাদেরকেও প্রতিদিন একটি ডিম ঝুকিমুক্তভাবে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।