বাংলাদেশে ইমু খামার কিভাবে শুরু করবেন

বাংলাদেশে ইমু খামার কিভাবে শুরু করবেন ( How to start Emu Farming in Bangladesh)

ইমু খামার ভারত , চীন সহ অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে । ইমু খামার অবশ্যই একটি লাভজনক ব্যবসা (Lucarative business) । ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশ সমূহে ,পাকিস্থানে ও চীনে ইমু পাখির আদর্শ খামার গড়ে উঠলেও বাংলাদেশে তা’ এখনো সম্ভবপর হয়নি । বাংলাদেশের খুলনা ও নরসিংদীতে সীমিত সংখ্যক ইমু নিয়ে ছোট আকারে ইমু খামার গড়ে উঠেছে । তবে তা’ শখের নিমিত্তে হলেও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাংলাদেশে ইমু খামার গড়ে উঠেনি। কারণ ইমু পাখির বিষয়ে খামারিদের এখনো সঠিক ধারণা নেই । অনেকেই ইমু খামার গড়ে তোলার ব্যপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ও ইমু সংক্রান্ত ধারণা ও তথ্য
নিতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশের আবহাওয়া  ও জলবায়ু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ন্যায় ইমু খামার গড়ে তোলার জন্য বেশ উপযোগী। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই বাংলাদেশেও ইমু খামার ব্যাপক আকারে গড়ে উঠবে।

ইমু বড় আকারের পাখির মধ্যে একটি যা রেটাইট গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত (Ratite group)। রেটাইট গ্রুপ বলতে সাধারণত বড় আকারের পাখিকে বুঝায়, বিশেষ করে যে সমস্ত পাখির পা বেশ লম্বা ও উড়তে পারে না  কিন্তু দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারে ( যেমন – উট পাখি , কেশোয়ারী)। ইমু পাখির আর্থিক মূল্য অনেক বেশি (High
economic value) । ইমু পাখির ডিম , মাংস ,তেল , চামড়া ও পালক বেশ মূল্যবান । ইমু পৃথিবীর
প্রায় সর্বত্রই সব ধরণের জলবায়ু ও  আবহাওয়ায় নিজেকে অভিযোজিত বা খাপ খাইয়ে মানিয়ে চলতে সক্ষম । ইমু খামার ব্যাপকভাবে ও সেমি ইন্টেনসিভ পদ্ধতি (Extensive and semi intensive farming system) উভয়ভাবে করা যেতে পারে । আমেরিকা ,অস্ট্রেলিয়া , চীন ও ভারত ইমু খামারের জন্য নেতৃত্বদানকারী রাষ্ট্র হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত ।

ভারত ও  বাংলাদেশের জলবায়ু বাণিজ্যিক ইমু খামারের জন্য খুবই উপযোগী । তাই আমাদের বাংলাদেশেও যারা বাণিজ্যিক ইমু খামার স্থাপনের কথা ভাবছেন তারা অবশ্যই নিঃচিন্তে ব্যবসায়ীক উদ্দ্যেশে ইমু খামার স্থাপন করতে পারেন এবং দ্রুতই বেশি বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। বাংলাদেশে যে কেউ খুব সহজে ইমু খামার
স্থাপন করতে পারবেন যাদের নিজস্ব জমি আছে । কিন্ত মূল কথা হলো , ইমু খামার স্থাপন করতে
হলে আগে ইমু পাখির বিষয়ে অবশ্যই মৌলিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইমু খামার স্থাপনের বিষয়ে
মৌলিক জ্ঞান বলতে যা বুঝায় তা’ হলো , ইমু পাখির খাদ্যাভাস , বাসস্থান , ইমুর প্রজননকালীন স্বাস্থের যত্ন ,ইমুর রোগ  ও ইমুর স্বভাব বা আচরণ । ইমু খামার স্থাপন করতে হলে আগে ইমু সংক্রান্ত যথাযথ ধারণা নিতেই হবে এবং ব্যবসা সংক্রান্ত সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ও এর পিছনে লাভ কি তা’ জানতে হবে। আমি আমার লেখায় , খুব
সংক্ষিপ্তাকারে কিভাবে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভিত্তিতে ইমু খামার স্থাপন করা যায় সে পদ্ধতি’ ধাপে ধাপে আলোচনা করার  চেষ্টা করছি ।

বাংলাদেশে ইমু খামার স্থাপনের সুবিধা ও আর্থিক দিক –

ইমু খামার স্থাপন বাংলাদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করছে । ইমু ফার্মিং ব্যবসায় নানামূখী সুবিধা আছে । বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ইমু খামার স্থাপনের লাভজনক দিক হলো –

১) ইমু পাখির মাংস খুবই স্বাস্থমসম্মত ও এর মাংস বেশ সু-স্বাদু । এর মাংসে চর্বি ও ক্লোস্টেরল খুবই সীমিত । কিন্তু প্রোটিন ও এনার্জির পরিমান অনেক বেশি।

২) ইমু পাখির উৎপাদিত ডিম , মাংস , চামড়া , তৈল ও পালক বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করা যায় ।

৩) ইমু খুব কম পরিমানে খাদ্য গ্রহণ করে ও তারা কম মূল্যমানের খাদ্য খেয়ে টিকে থাকতে পারে ।

৪) ইমু সহজেই অন্যান্য লাইভস্টক প্রাণি ও পোল্ট্রি বার্ডস- এর চেয়ে দ্রুত বংশ বিস্তার করতে সক্ষম ।

৫) ইমু পাখির রোগ খুবই কম । তারা সহজেই প্রায় সকল ধরণের এগ্রো ক্লাইমেটিক অবস্থায় (All types of agro climatic condition) নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে । বাংলাদেশের জলবায়ু ব্যবসায়ীক উদ্দ্যেশে বাণিজ্যিক ইমু খামার খুবই চমকপ্রদ।

৬) ইমু খামার ব্যবসায় বেশ লাভজনক ও এটি হতে পারে একটি বড় আয়ের উৎস। এছাড়াও বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশে হতে পারে বেকার সমস্যা দূরীকরণের হাতিয়ার ।

৭) ইমু পাখির খামার স্থাপনের নিমিত্তে ব্যাংক ঋণের জন্য ব্যাংকে আবেদন করা যেতে পারে। ইমু পাখির খামার করতে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞানের দরকার হয় না (Emu farming dose not require technical and management knowledge) । ইমু পাখির বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান থাকলেই যে কেউ ইমু খামার স্থাপন করে সহজে খামারের উন্নতি করতে পারবে ।

বাংলাদেশে ইমু খামার যে ভাবে শুরু করবেন (Starting Emu Farming in Bangladesh):-

খামার স্থাপনের জন্য যদি জমি থাকে তা’ হলে সহজেই ইমু খামার স্থাপন করে বাণিজ্যিকভাবে ইমু পাখির ব্যবসা করা যেতে পারে । বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে ইমু পাখির খামার স্থাপনে নিম্নে ধাপে ধাপে তথ্য সমূহ উল্লেখ করা হলো –

খামারের স্থান নির্বাচন (Selection of Farm Location) :–

বাংলাদেশে বাণিজ্যিক ইমু খামার স্থাপন করতে প্রথমতঃ খামারের জন্য উপযুক্ত জমি বা স্থান নির্বাচন করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি খামার স্থাপনের জন্য নির্ধারীত জমির প্লট নিজস্ব হয়ে থাকে। ইমু খামারের জন্য নির্বাচিত জমি বা স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে । ব্যবসায়ীক ভিত্তিতে খামার স্থাপনের শুরুতে যে বিষয় গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে তা’ হলো  –

পরিপূর্ণমাত্রায় বিশুদ্ধ ও পরিস্কার পানি ,

স্বাস্থসম্মত ও পুষ্টিকর খাবারের উৎস ,

সস্তা দরে শ্রমিক ,

ঔষধ পত্রের সুবিধাদী ,

যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধাদী ,

নিকটস্থ ইমু পাখির বাজার ইত্যাদী ।

ইমু খামারের জন্য জমি নির্বাচনের সময়ে এ সব বিষয়াদী সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে ওয়াকিবহাল ও যত্নশীল থাকতে হবে।

ইমু পাখির বাচ্চার ব্যবস্থাপনা (Management of Emu chicks) : –

সদ্য ডিম থেকে ফুটে নতুন জন্ম নেওয়া  ইমু বাচ্চার  (Newly born Emu chick) দৈহিক ওজন ডিমের মোট  ওজনের প্রায় ৬৭%  অর্থাৎ বাচ্চার ওজন ৩৭০ গ্রাম থেকে ৪৫০ গ্রাম । যদিও বাচ্চার সঠিক ওজন নির্ভর করে ইমু পাখির ডিমের আকারের উপর । প্রথম ২ থেকে ৩ দিন ইমুর বাচ্চা ইনকিউবেটরের ভিতরে রাখতে হবে (Keep the Chicks Inside the Incubator for their first 2 to 3 days) । এতে বাচ্চার পালক  দ্রুত ও যথাযথভাবে শুকিয়ে যাবে এবং বাচ্চার কুসুম (Quick absorption of the Yolk) এবজর্পশন হবে। এর পরে বাচ্চা ফ্লোরে ডিপ লিটারে রাখতে হবে। এর জন্য লিটার হিসাবে ধানের তুষ ব্যবহার করতে হবে ও লিটার নতুন গানি ব্যাগ দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। এক একটি ব্রুডারে ২৫ থেকে ৪০ টি ইমুর বাচ্চা রাখতে হবে ও প্রতিটি বাচ্চার জন্য প্রথম তিন সপ্তাহ পর্যন্ত  ৪ বর্গ ফুট জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে। প্রথম ১০ দিন  ব্রুডারের তাপমাত্রা ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট ও ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ বয়স পর্য়ন্ত ব্রুডারের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমিয়ে এনে ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখতে হবে। ব্রুডারের তাপমাত্রা যথাযথভাবে মেনে চলা ইমু পাখির বাচ্চা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বাচ্চার ব্রুডিং চলাকালিন অবস্থায় ব্রুডারের নীচে সঠিকমাত্রায় খাদ্যের পাত্র ও পানির পাত্র সরবরাহ দিতে হবে। বাচ্চা যাতে চিকগার্ড টপকিয়ে পার হতে না পারে সেজন্য চিকগার্ড টানটানভাবে  সোঁজা করে তৈরি করতে হবে। চিকগার্ডের  উচ্চতা কমপক্ষে ২.৫ ফুট হতে হবে। ব্রুডারের ভিতরে
সর্বদা বাল্ব জ্বালিয়ে রাখতে হবে। একটি ৪০ ওয়াটের বাল্ব ১০০ বর্গফুট স্থানের জন্য যথেষ্ঠ । ৩ সপ্তাহ  বয়সের পরে ব্রুডারের জায়গা চিকগার্ডের অভ্যন্তরে বৃত্তাকারে প্রসস্থ করতে হবে। ইমুর বাচ্চার দৈহিক ওজন প্রায় ১০ কেজি না পৌছানো পর্যন্ত কিংবা বাচ্চার বয়স ১৪ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাকে চিক স্টার্টার ম্যাশ খাদ্য সরবরাহ দিতে হবে। ইমুর বাচ্চার স্বাস্থসম্মত জীবন মান ও যথাযথ দৈহিক বৃদ্ধির জন্য বাচ্চা যাতে দৌড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পায় সে দিকে নজর রাখতে হবে। তাই ভালো উৎপাদনের জন্য ও ইমু যাতে আপন গতিতে দৌড়াতে পারে সেজন্য ইমু পাখিকে পর্যাপ্ত জায়গা দিতে হবে। সাধারণত , ৩০ থেকে ৪০ বর্গফুট  জায়গা প্রায়  প্রতি ৪০ টি বাচ্চা পালনের জন্য উপযুক্ত জায়গা । ফ্লোর অব্শ্যই আর্দতামুক্ত হতে হবে ও সুন্দর ড্রেইনেজ সুবিধাদি থাকতে হবে। অবশ্যই নজর রাখতে হবে যাতে বাচ্চা গাদাগাদি (Over Crowd)  অবস্থায় না থাকে।

ইমুর দৈহিক বৃদ্ধি ব্যবস্থাপনা  (Grower Management of Emu) : 

ইমু বেশ বড় আকারের পাখি । উট পাখির পরেই দ্বিতীয় বৃহত্তম বড় পাখি ইমু । ইমু পাখির জন্য দরকার বড় আকারের পানির পাত্র , খাদ্যের পাত্র ও বড়সড় মেঝে (Large floor space) ।  বংশ বিস্তারের জন্য খামারে পুরুষ ও  স্ত্রী  ইমু রাখা ভালো । তাই আগে ভাগেই পুরুষ ও স্ত্রী ইমু সনাক্ত করা খুবই জরুরী  ও তাদের আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ইমুর শেডকে শুষ্ক ও সুন্দর রাখতে শেডের ভিতরে লিটার খুব ভালোভাবে রাখতে হবে। এর জন্য লিটার হিসাবে ধানের তুষ ব্যবহার করলে ভালো হয় । ইমুর ৩৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত কিংবা ২৫ কেজি দৈহিক ওজন বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত ইমুকে খাদ্য হিসাবে গ্রোয়ার ম্যাশ ফিড সরবরাহ দিতে হবে। ইমু পাখির খাদ্যে গ্রোয়ার ম্যাশ ফিডের পাশাপাশি প্রায় ১০% সবুজ খাদ্য দিতে হবে। ইমুর চাহিদনিুযায়ী পর্যাপ্ত পরিমানে মানসম্মত খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ দিতে হবে। ইমুর বাড়ন্তকালীন সময়ে , প্রতি ৪০ টি ইমুর জন্য ৪০ – ১০০ বর্গফুট জায়গা বরাদ্দ দিলেই যথেষ্ট । ইমু শেডের মেঝে বা ফ্লোর অবশ্যই আর্দ্রতা মুক্ত ও সহজ পয়োঃনিস্কাশনের সুব্যবস্থা  থাকতে হবে। বয়স্ক ইমু পাখির সাথে বাচ্চা বা গ্রোয়ার ইমু কখনোই একত্রে রাখা যাবে না।

ব্রিডার ইমুর ব্যবস্থাপনা (Management of Breeder Emu Birds) : —

সাধারনত ইমু পাখি জন্মের ১৮ – ২৪ মাস বয়সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয় । উপযুক্ত ব্রিডিং কাজে ব্যবহারের  জন্য স্ত্রী ও পুরুষ ইমুর অনুপাত হতে হবে ০১ অনুপাত ০১ । প্রতি জোড়া ইমু পাখির যৌন ক্রিয়া সম্পাদনকালীন সময়ে ২৫ বর্গফুট মেঝের দরকার । যৌন ক্রিয় সম্পাদন ও তাদের গোপনীয়তা রক্ষার্থে  ছোট ছোট গুল্ম জাতীয় গাছ বা ঝোপ (Shrubs) এর ব্যবস্থা করলে ইমুর জন্য ভালো হয় । ইমুর ব্রিডিং কালীন সময়ে ইমুর খাদ্যে অতিরিক্ত পরিমানে ভিটামিন ও মিনারেলস সরবরাহ দিতে হবে। এতে ইমুর ডিমের নিষিক্ততা ও হ্যাচাবিলিটি বেড়ে যাবে। সাধারণত একটি পূর্ণ বয়স্ক ইমু পাখি দৈনিক প্রায় ০১ কিলোগ্রাম খাদ্য গ্রহণ করে । কিন্ত যৌন ক্রিয়া সম্পাদন কালীন সময়ে ইমু পাখির খাদ্য গ্রহণ মাত্রা অধিক হারে হ্রাস পায় । একটি স্ত্রী ইমু পাখি প্রথম বছরে প্রায় ১৫ টি ডিম দেয়  এবং পরের বছর থেকে ডিমের উৎপাদন ধারাবহিকভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে । তারা এক বছর ৬ মাস বয়স থেকে প্রথম ডিম দিতে শুরু করে ।  প্রতিটি ডিমের ওজন প্রায় ৪৭৫ গ্রাম থেকে ৬৫০ গ্রাম পর্যন্ত হয় । ইমু পাখির ডিম দেখতে মার্বেলের মতো ও সবুজাভাব । স্বাভাবিক ভাবে ইমু পাখির ডিমের ইনকিউবেশন প্রিড়িয়ড ৫২ দিন  । ইমু পাখির ডিম হ্যাচিং এর জন্য যথাযথ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । তদুপরি , ভালো ও সুস্থ ইমু বাচ্চার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাপনা ও বাড়তি যত্ন নিঃশ্চিত করা দরকার । অতএব , ইমু পাখির ব্রিডিং কালীন  পুরো সময় জুড়েই খুব যত্নশীল হওয়া দরকার ।

ইমু পাখির খাদ্য ব্যবস্থাপনা (Feeding Management of Emu Birds) : —  

ইমু পাখির দৈহিক বৃদ্ধি  ও কাংখিত উৎপাদনের জন্য অন্যান্য পাখি বা প্রাণির মতোই ইমু পাখির জন্যও পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যের প্রয়োজন । ভালো ও উন্নতমানের খাদ্য ইমু পাখিকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখে । তাই বাংলাদেশে লাভজনক ইমু খামার করতে হলে ইমু পাখিকে অবশ্যই উচ্চ মানের ও পুষ্টিকর খাবার ইমু পাখির
চাহিদানুযায়ী সরবরাহ দিতে হবে। ভালো ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি ইমু পাখিকে পর্যাপ্ত মাত্রায় বিশুদ্ধ ও পরিস্কার পানি নিয়মিত সরবরাহ নিঃশ্চিত করতে হবে।

( Emu Nutrient Requirement )

                            ইমু পাখির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি

ক্রমিক নং স্থিতিমাপ (Parameter) স্টার্টার ১০-১৪
সপ্তাহ বয়স বা ১০ কিলোগ্রাম দৈহিক ওজন পর্যন্ত
গ্রোয়ার ১‘৫-৩৪
সপ্তাহ বয়স বা ১০ -২৫ কিলোগ্রাম দৈহিক ওজন পর্যন্ত
ব্রিডার
০১ ক্রুড প্রোটিন% ২০.০০ ১৮.০০ ২০.০০
০২ লাইসিন % ১.০০ ০.৮০ ০.৯০
০৩ মিথিওনিন % ০.৪৫ ০.৪০ ০.৪০
০৪ ট্রিপটোফ্যান
%
০.১৭ ০.১৫ ০.১৮
০৫ থ্যারিওনিন % ০.৫১ ০.৪৮ ০.৬০
০৬ ক্যালসিয়াম % ১.৫০ ১.৫০ ২.৫০
০৭ টোটাল ফসফরাস% ০.৮০ ০.৭০ ০.৬০
০৮ সোডিয়াম ক্লোরাইড% ০.৪০ ০.৩০ ০.৪০
০৯ ক্রুড ফাইবার(ম্যাক্স.)% ০৯.০০ ১০.০০ ১০.০০
১০ ভিটামিন ‘এ(আইইউ/কেজি) ১৫০০০ ৮৮০০ ১৫০০০
১১ ভিটামিন ডি৩(icu/kg)) ৪৫০০ ৩৩০০ ৪৫০০
১২ ভিটামিন –ই(iu/kg) ১০০.০০ ৪৪.০০ ১০০.০০
১৩ ভিটামিন বি১২(ug/kg) ৪৫.০০ ২২.০০ ৪৫.০০
১৪ কোলিন(mg/kg) ২২০০.০০ ২২০০.০০ ২২০০.০০
১৫ কপার(mg/kg) ৩০.০০ ৩৩.০০ ৩০.০০
১৬ জিংক(mg/kg) ১১০.০০ ১১০.০০ ১১০.০০
১৭ ম্যাঙ্গানিজ(mg/kg) ১৫০.০০ ১৫৪.০০ ১৫০.০০
১৮ আয়োডিন(mg/kg) ১.১০ ১.১০ ১.১০

                     ইমু পাখির খাদ্য উপাদান (Feed Ingredients of Emu Birds)

                               ( প্রতি ১০০.০০ কিলোগ্রাম খাদ্যে)

ক্রমিক নং খাদ্য উপাদান স্টার্টার গ্রোয়ার ফিনিশার ব্রিডার মেইন্টেনেন্স
০১ ভূট্টা ৫০ ৪৫ ৬০ ৫০ ৪০
০২ সয়া মিল ৩০ ২৫ ২০ ২৫ ২৫
০৩ DORB* ১০ ১৬.১৫ ১৬.২৫ ১৬.৫০ ১৬.৩০
০৪ সানফ্লোয়ার ৬.১৫ ১০ ০০ ০০ ০.৫
০৫ ক্যালসাইট পাউডার ১.৫ ১.৫ ১.৫ ১.৫ ১.৫
০৬ ডিসিপি ১.৫ ১.৫ ১.৫ ১.৫ ১.৫
০৭ শেল গ্রিট ০.০ ০.০ ০.০ ০.০ ০.০
০৮ লবণ ০.৩ ০.৩ ০.৩ ০.৩ ০.৩
০৯ ট্রেস মিনারেলস ০.১ ০.১ ০.১ ০.১ ০.১
১০ ভিটামিন ০.১ ০.১ ০.১ ০.১ ০.১
১১ কক্সিডিওস্ট্যাট ০.০৫ ০.০৫ ০.০৫ ০.০ ০.০
১২ মিথিওনিন ০.২৫ ০.১৫ ০.২৫ ০.২৫ ০.১৫
১৩ কোলিন ক্লোরাইড ০.০৫ ০.০৫ ০.০৫ ০.০৫ ০.০৫

বিঃদ্রঃ –* DORB meaning –De Oild Rice Bran.

ইমু পাখির যত্ন ও ব্যবস্থাপনা (Care and Management of Emu Birds) : —

ইমু পাখি বেশ শক্তিশালী ও দীর্ঘায়ু পাখি। মৃত্যুর হার বেশ কম ও স্বাস্থ ঝুকিও খুব বেশি না । বাচ্চা ইমু ও জুভেনিলস (Chicks and Juveniles) কোন কোন সময় কিছু স্বাস্থ সমস্যায় ভুগে। ইমু কলি ইনফেকশন,কলেস্ট্রেডিয়াল ইনফেকশন , ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন, পায়ের বিকলঙ্গতা ,পুষ্টিহীনতা ও খাদ্য না খাওয়ার প্রবণতা (Starvation) সমস্যায় ভোগে। এধরণের স্বাস্থগত সমস্যার মূল কারণ হলো জেনেটিক ডিসঅর্ডার (Genetic disorder), যত্নের অভাব ,অপুষ্টি ও ধকল । ইমু পাখির আরো সমস্যা হলো সংক্রামক ও কিছু স্বাস্থগত সমস্যা । বিশেষ করে এসপারজিলোসিস (Aspergillosis) ,ক্যানডিডিয়াসিস (Candidiasis),এসকারিড ইনফেস্টেশন(Ascarid Infestation) ,কক্সিডিওসিস (Coccidiosis) ,সালমোনেলা সংক্রমণ (Salmonella Infection) ,রাইনাইটিস (Rhinitis) ও উকুনের উপদ্রব (Lice Infestation) সহ ইত্যাদি । বহিঃপরজীবি ও অন্তঃপরজীবির উপদ্রব ঠেকাতে আইভারমেকটিন (Ivermectin) ব্যবহার করতে
হবে। এছাড়াও রাণীক্ষেত রোগের যথাযথ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য বয়সের প্রথম সপ্তাহে ল্যাসোটা (1st Lasota Vaccine) ,চতুর্থ সপ্তাহে বুস্টার ডোজ ল্যাসোটা (Lasota Booster) , ৮ সপ্তাহ ,১৫ সপ্তাহ ও ৪০ সপ্তাহ বয়সে মুক্তেসর স্ট্রেইন (Mukteswer Strain) ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হবে এবং সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে ইমু পাখির উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত যত্ন নেওয়া ।

বিপনন ব্যবস্থাপনা
(
Marketing Management) : —

বাজারজাতকরণের মতো ইমু পাখির বয়স হলে ইমু ‍ও ইমু পাখি থেকে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে হবে। ইমুর মাংস ,চামড়া , ডিম , পালক, তৈল , একদিন বয়সের বাচ্চা ইমু (Day old chicks) ,বাড়ন্ত ইমু (Growing Emu Birds) । সাধারণত প্রতিটি ইমু বাচ্চার (Day old Emu Chicks)  দাম ৪০০০/০০ থেকে ৫০০০/০০ ভারতীয়ান রুপি ও ১৫ মাস বয়সের বাড়ন্ত ইমুর দাম ২০,০০০/০০ থেকে ২৫,০০০/০০ ভারতীয়ান রুপি । তবে ইমু খামার বাণিজ্যিকভাবে করলে প্রথমে লোকাল বাজার (Local Market)  সৃষ্টি করতে হবে ও তা’ বিক্রি করতে হবে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক বাজারে ইমু ও ইমু পাখির উৎপাদিত পণ্য বিপননের ব্যবস্থা করতে হবে ।ইমু পাখির খামার সম্পূর্ণরূপে একটি লাভজনক ব্যবসা ।  বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু ঠিক পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ন্যায় বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়ীক উদ্দ্যেশে ইমু খামারের জন্য খুবই উপযোগী । বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ,ইমু খামার স্থাপনের পূর্বে কিছু ভালো ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন কতিপয়  ইমু খামার প্রত্যক্ষভাবে (Practically) সংশ্লিস্ট খামারিকে পরিদর্শন করে ইমু খামার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ধারণা অর্জন করা দরকার  এবং সঠিক ধারণা অর্জন করেই কেবল  একজন খামারিকে ইমু খামার স্থাপনের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে।