উট পাখির বিভিন্ন ধরণের রোগ

উট পাখির রোগ (Diseases of Ostrich Birds)

উট পাখির রোগ ফলপ্রসূ উট পাখির খামারের জন্য অন্যতম অন্তরায়।  উট পাখি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী ও শক্তিশালী পাখি । উট পাখি অতি সহজে প্রায় সব ধরণের জলবায়ু ও আবহাওয়ায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে ও সহ্য করতে সক্ষম । খুব বেশি গরম আবহাওয়ায় তারা তাদের ডানা খুলে ও ঝাপটা মেরে নিজেকে সতেজ রাখতে বিশুদ্ধ ও শীতল বায়ু তৈরি করে। তারা উত্তপ্ত বালু , কনকনে ঠাণ্ডা বরফ ও বরফে ঘেরা অঞ্চলে বাসবাস করতে পারে । তারা শক্তিশালী পাখি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও তাদের অনেক বেশি। তদুপরি, যখন তাদের যত্ন , ব্যবস্থাপনা ,বাসগৃহ ও খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক হারে অসাঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয় তখন তারা এন্ডেমিক রোগ (Endemic diseases) আক্রান্ত হয় ।

বাচ্চা উট পাখি (Baby Ostrich) খুব সহজে নানা ধরণের রোগে আক্রান্ত হয় ও জন্মের প্রথম তিন মাস পর্যন্ত রোগের প্রতি খুবই সংবেদনশীল এবং বাচ্চা (Baby Ostrich) অবস্থায় মৃত্যুর হার অনেক বেশি।

উট পাখির বিভিন্ন ধরণের রোগ (Different types of Ostrich Diseases)

উট পাখি অনেক ধরণের সংক্রামক ও পরজীবী জনিত রোগে আক্রান্ত হয় ; যা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো –

পরজীবী জনিত রোগ (Parasitic Diseases)

উট পাখির অনেক ধরণের পরজীবী জনিত রোগ রয়েছে ; যা উট পাখির জন্য খুবই ক্ষতিকর (Harmful for Ostrich) । উট পাখির শরীরে দু’ ধরণের পরজীবী দেখা যায় –

ক) বহিঃপরজীবী (External parasites) –

সাধারণত এ ধরণের পরজীবী উট পাখির দেহের বাহিরে বসবাস করে। উট পাখির দেহে বসবাসের পাশাপাশি এরা উট পাখির দেহ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে । নিম্নে উট পাখির দেহে বসবাস করে এমন কয়েকটি বহিঃপরজীবীর তালিকা দেওয়া হলো –

  • আঁটালি (Tikes) – উট পাখির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর পরজীবী হলো আঁটালি বা Tikes । কারণ আটালি উট পাখির দেহে নানা ধরণের রোগ ট্রান্সমিট করে থাকে। বিশেষ করে কঙ্গো ফিভার (Congo Fever) যা উট পাখির জন্য সবচেয়ে বেশি মারাত্মক ক্ষতিকর ও যা মানব দেহে সংক্রামিত হয়  এবং এর মূল বাহক হলো আঁটালি। আঁটালি উট পাখির চামড়ার ব্যাপক  ক্ষতি সাধন করে । আঁটালি উট পাখির চামড়ায় গর্তের সৃষ্টি করে । আঁটালি উট পাখির খামারের জন্য একটি বড় ধরণের আঘাত (Tikes is a great threat in Ostrich Farming) ।
  • উকুন (Lice) – উকুন উট পাখির পালকের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর (Lics is very harmful for feathers of Ostrich) । উট পাখির পালক বাজারে বেশ মহামূল্যবান (Precious) বস্তু ।  কিন্তু উট পাখির দেহে উকুনের আক্রমণ হলে পালকের ক্ষতি সাধন করে ও উট পাখির খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হয় ।

উট পাখির দেহে এজাতীয় পরজীবীর আক্রমণ ঘটলে তা প্রতিরোধ করতে হবে । সে জন্য উট পাখিকে আইভারমেকটিন খাওয়ানো যেতে পারে ।

খ ) অন্তঃপরজীবী (Internal Parasites) –

অন্তঃপরজীবী সাধারণত উট পাখির দেহের অভ্যন্তরে বসবাস করে ও উট পাখির দেহের পুষ্টি শোষণ করে উট পাখির ক্ষতি সাধন করে । নিম্নে কতিপয় ক্ষতিকর অন্তঃপরজীবীর তালিকা উল্লেখ করা হলো-

  • ফিতাকৃমি (Tape worm) – ফিতাকৃমি সাধারণত লম্বা ও চেপ্টা প্রকৃতির হয়। ফিতাকৃমি লম্বায় প্রায় ৫০ থেকে ১০০সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। ফিতাকৃমি উট পাখির দেহের অভ্যন্তরস্থ ক্ষুদ্রান্ত্রে বসবাস (Lives in the small intestine of Ostrich and take food)  করে ও সেখানেই খাদ্য গ্রহণ করে । ফিতাকৃমি উট পাখির দেহ থেকে প্রায় সকল পুষ্টি উপাদান শোষণ করে নেয় । ফলে উট পাখি ক্ষীণকায় বা জীর্ণ-শীর্ণ  (Emmaciation) হয়ে পরে । এ জাতীয় কৃমি প্রতিরোধে উট পাখিকে প্রতি তিন মাস পর পর “Lintex Combats” প্রয়োগ করতে হবে।
  • ওয়াইর ওয়ার্ম (Wire worm) –এ জাতীয কৃমি সাধারণত বেশ ছোট আকারের হয় । এ কৃমির দৈর্ঘ প্রায় ৩ মিমি ও এটি উট পাখির পাকস্থলির প্রাচীরে অবস্থান করে । এ কৃমি সাধারণত খালি চোখে দেখা যায় না। ওয়াইর ওয়ার্ম পাকস্থলির প্রাচীরের প্রচুর ক্ষতি সাধন করে (Wire worm make a lot of damaged of Stomach wall of Ostrich) । উট পাখি ওয়াইর ওয়ার্মে আক্রান্ত হলে এ জাতীয় কৃমি উট পাখির দেহ থেকে সরাসরি রক্ত শোষণ করার ফলে উট পাখি হঠাৎ মারা যায়। তাই এ জাতীয় কৃমির আক্রমণ থেকে উট পাখিকে রক্ষা করতে হলে নিয়মিত কৃমি নাশক সেবন করাতে হবে।

সংক্রামক জণিত রোগ (Infectious diseases of Ostrich) –

অন্যান্য পোল্ট্রির ন্যায় উট পাখিও বিভিন্ন ধরণের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। নিম্নে অতি সাধারণ কয়েকটি সংক্রামক রোগের নামের তালিকা দেওয়া হলো যা উট পাখির জন্য হুমকি । যথা –

ক) হেমোরেজিক এন্টেরাইটিস (Haemorrhagic Enteritis) –

বিশেষ করে বাচ্চা উট পাখি (Baby Ostrich)  যাদের বয়স ১ থেকে ৩ মাসের মধ্যে তারাই কেবল হেমোরেজিক এন্টেরাইস রোগে আক্রান্ত হয় ও খুব বেশি মৃত্যুর ঝুকিতে থাকে । এ রোগ সাধারণত ক্লোস্ট্রেডিয়াল নামক জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হলে বাচ্চা উট পাখির মৃত্যুর হার বেশি হয় । বাংলাদেশে এ রোগের ভ্যাকসিন এখনো তৈরি না হলেও অনেক দেশে পাওয়া যায় । তবে স্যানিটেশন পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দিলে এ রোগের প্রাদূর্ভাব বহুলাংশে কমানো সম্ভব।

খ) এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (Avian Influenza) –

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সকল পাখির জন্য প্রাণঘাতী রোগ । ৬ মাসের কম বয়সী উট পাখি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুর হার অনেক বেশি হয় । এ রোগ ভাইরাস জণিত হওয়ায় কোন চিকিৎসা নেই । এ রোগে উট পাখি আক্রান্ত হলে উট পাখির মুত্র সবুজ রঙ্গের হয়ে থাকে । এ রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিলে যতদূর সম্ভব খুব তাড়াতাড়ি কম বয়সী উট পাখিকে সম্পূর্ণরূপে আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

গ) এভিয়ান পক্স রোগ (Avian Pox Diseases)—

এভিয়ান পক্স উট পাখির জন্য খুবই সংবেদনশীল ও ক্ষতিকর একটি ভাইরাস জণিত  রোগ । যথযথ সময়ে এ রোগ প্রতিরোধে পদক্ষেপ না নিলে খামারিকে চড়া মাসুল দিতে হবে। এ রোগে প্রধান লক্ষণ হলো চোখ ,মুখ ও ঠোট এর চারপাশে আঁচিলের (Warty)  ন্যায় গোটা বা নডিউলস (Nodules) যা দেখতে বাদামী বর্ণের হয় । সাধারণত মশার কামড়ে এ রোগ দ্রুত ছড়ায় । এটি ভাইরাস জণিত রোগ । বিশেষ করে গ্রীস্মকালে ও বেশি আর্দ্রতাপূর্ণ পরিবেশে এ রোগ বেশি ছড়ায় ।  তবে ভ্যাকসিন প্রয়োগে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

ঘ ) রাণীক্ষেত রোগ বা নিউক্যাসল ডিজিজ (Ranikhet diseases or Newcastle diseases) –

উট পাখির ভীতিকর রোগ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর রোগ হলো নিউক্যাসল বা রাণীক্ষেত রোগ । গ্রোয়িং বা তরুন বয়সের উট পাখি এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি । এ রোগের প্রধান উপসর্গ হলো ঝিমানিভাব বা মাথা ঘোরানো (Giddines) , ভাসসম্য হারিয়ে ফেলা ,একেপাশে ঝুলেপড়া ,টলতে টলতে হাটা ,মাথা সহ হেলে দিলে তিন পায়ে দ্বাড়ানোর মতো মনে হওয়া ইত্যাদি । এ রোগে আক্রান্ত হলে উপযুক্ত কোন চিকিৎসা নেই । যথাযথ ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও উন্নতমানের ব্যবস্থাপনা  এ রোগ প্রতিরোধের একমাত্র কৌশল ।